তেলাওয়াতঃ
﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ﴾
অনুবাদঃ
হে মানব সকল! তোমরা গোলামী কর তোমাদের রবের, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টি করেছেন তোমাদের পূর্ববর্তীদেরও। আশা করা যায় (এ গোলামী করার মাধ্যমে) তোমরা মুত্তাকী হতে হতে পারবে ( খোদাভীরু হতে পারবে)।
সূরার নামকরণঃ
§ সূরার নাম আল-বাকারাহ।
§ বনি ইসরাঈলের ধনাঢ্য নিঃসন্তান ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনা। যাকে তার ভাতিজা হত্যা করে প্রতিবেশীর দরজায় ফেলে আসে এবং প্রতিবেশীর উপর হত্যার অভিযোগ দায়ের করে। ঘটনার নিষ্পত্তির জন্য মুসা আ. এর নিকট বিষয়টি ন্যাস্ত হয়। তখন তাদেরকে একটি গরু জবেহ করার নির্দেশ দেয়া হয়। তারা যে কোন একটি গরু জবেহ করলেই হতো। কিন্তু তারা গরু সম্পর্কে অবান্তর প্রশ্নের অবতারণা করে। অবশেষে নির্দিষ্ট গরুকে তারা সেই গরুর চামড়াভর্তি স্বর্ণের সমপরিমাণ মূল্যে ক্রয় করে এবং গরুটি জবেহ করে তার গোশত দিয়ে মৃত ব্যক্তির শরীর স্পর্শ করে। এতে মৃত ব্যক্তিটি ক্ষনিকের জন্য জীবিত হয় এবং হত্যাকারীর নাম বলে এবং আবার মৃত্যু বরণ করে। সেই গরু নিয়ে এই সূরায় আলোচনা হয়েছে।
§ এ সূরার আয়াত ৬৭, ৬৮, ৬৯ এবং ৭১ নম্বর আয়াতে তথা মোট ৪বার গাভীর উল্লেখ থাকার কারণে এর এই নামকরণ করা হয়েছে।
﴿وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تَذْبَحُوا بَقَرَةً ۖ قَالُوا أَتَتَّخِذُنَا هُزُوًا ۖ قَالَ أَعُوذُ بِاللَّهِ أَنْ أَكُونَ مِنَ الْجَاهِلِينَ﴾
৬৭. এরপর স্মরণ করো সেই ঘটনার কথা যখন মূসা তার জাতিকে বললো, আল্লাহ তোমাদের একটি গাভী যবেহ করা হুকুম দিচ্ছেন৷তারা বললো, তুমি কি আমাদের সাথে ঠাট্টা করছো? মূসা বললো, নিরেট মূর্খদের মতো কথা বলা থেকে আমি আল্লাহ কাছে আশ্রয় চাচ্ছি৷
﴿قَالُوا ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّن لَّنَا مَا هِيَ ۚ قَالَ إِنَّهُ يَقُولُ إِنَّهَا بَقَرَةٌ لَّا فَارِضٌ وَلَا بِكْرٌ عَوَانٌ بَيْنَ ذَٰلِكَ ۖ فَافْعَلُوا مَا تُؤْمَرُونَ﴾
৬৮. তারা বললো, আচ্ছা তাহলে তোমার রবের কাছে আবেদন করো তিনি যেন সেই গাভীর কিছু বিস্তারিত বিবরণ আমাদের জানিয়ে দেন৷ মূসা জবাব দিল আল্লাহ বলছেন, সেটি অবশ্যি এমন একটি গাভী হতে হবে যে বৃদ্ধা নয়, একেবারে ছোট্ট বাছুরটিও নয় বরং হবে মাঝারি বয়সের৷ কাজেই যেমনটি হুকুম দেয়া হয় ঠিক তেমনটিই করো৷
﴿قَالُوا ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّن لَّنَا مَا لَوْنُهَا ۚ قَالَ إِنَّهُ يَقُولُ إِنَّهَا بَقَرَةٌ صَفْرَاءُ فَاقِعٌ لَّوْنُهَا تَسُرُّ النَّاظِرِينَ﴾
৬৯. আবার তারা বলতে লাগলো, তোমার রবের কাছে আরো জিজ্ঞেস করো, তার রংটি কেমন? মূসা জবাব দিলঃ তিনি বলছেন, গাভীটি অবশ্যি হলুদ রংয়ের হতে হবে, তার রং এতই উজ্জল হবে যাতে তা দেখে মানুষের মন ভরে যাবে৷
﴿قَالَ إِنَّهُ يَقُولُ إِنَّهَا بَقَرَةٌ لَّا ذَلُولٌ تُثِيرُ الْأَرْضَ وَلَا تَسْقِي الْحَرْثَ مُسَلَّمَةٌ لَّا شِيَةَ فِيهَا ۚ قَالُوا الْآنَ جِئْتَ بِالْحَقِّ ۚ فَذَبَحُوهَا وَمَا كَادُوا يَفْعَلُونَ﴾
৭১. মূসা জবাব দিল আল্লাহ বলছেন,সেটি এমন একটি গাভী যাকে কোন কাজে নিযুক্ত করা হয়না, জমি চাষ বা ক্ষেতে পানি সেচ কোনটিই করে না, সুস্থ-সবল ও নিখুঁত ৷ একথায় তারা বলে উঠলো, হাঁ, এবার তুমি ঠিক সন্ধান দিয়েছো ৷ অতপর তারা তাকে যবেহ করলো, অন্যথায় তারা এমনটি করতো বলে মনে হচ্ছিল না৷
§ বাকারা মানে গাভী। সূরার নাম আল-বাকারাহ করার অর্থ কেবল এতটুকু যে, এই সূরায় গাভীর কথা বলা হয়েছে ।
সূরা আল-বাকারাহ সম্পর্কেঃ
عَنْ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ< أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ: الْبَقَرَةُ سَنَام الْقُرْآنِ وَذُرْوَتُهُ، نَزَلَ مَعَ كُلِّ آيَةٍ مِنْهَا ثَمَانُونَ مَلَكًا، وَاسْتُخْرِجَتْ: اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ، مِنْ تَحْتِ الْعَرْشِ، فَوُصِلَتْ بِهَا، أَوْ فَوُصِلَتْ بِسُورَةِ الْبَقَرَةِ.
রাসূল সা. বলেছেনঃ সূরা বাকারা কুরআনের কুঁজ এবং চূড়া। এর এক একটি আয়াতের সংগে ৮০জন ফেরেশতা উর্ধগগন থেকে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। বিশেষ করে আয়াতুল কুরসি তো খাস আরশ হতে অবতীর্ণ হয়েছে এবং এই সূরার সংগে মিলানো হয়েছে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ < قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ لِكُلِّ شَيْءٍ سَنَامٌ، وَإِنَّ سَنَام الْقُرْآنِ الْبَقَرَةُ، وَفِيهَا آيَةٌ هِيَ سَيِّدَةُ آيِ الْقُرْآنِ: آيَةُ الْكُرْسِيِّ
রাসূল সা. বলেছেনঃ প্রত্যেকটা জিনিসের একটা উচ্চতা থাকে। কুরআনের উচ্চতা হলো সূরা বাকারা। এই সূরার মধ্যে এমন একটি আয়াত আছে, যা সমস্ত কুরআনের নেতা। আর তা হলো আয়াতুল কুরসী।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ < أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ: لَا تَجْعَلُوا بُيُوتَكُمْ قُبُورًا، فَإِنَّ الْبَيْتَ الَّذِي يُقْرَأُ فِيهِ سُورَةُ الْبَقَرَةِ لَا يدخله الشيطان
রাসূল সা. বলেছেনঃ তোমরা নিজেদের ঘরকে কবরে পরিণত করোনা। যে ঘরে সূরা বাকারা পাঠ করা হয়, সেখানে শয়তান প্রবেশ করতে পারেনা।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ < قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ لَا ألْفَيَنَّ أحَدَكم، يَضَع إِحْدَى رِجْلَيْهِ عَلَى الْأُخْرَى يَتَغَنَّى، وَيَدَعُ سُورَةَ الْبَقَرَةِ يَقْرَؤُهَا، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَفِرُّ مِنَ الْبَيْتِ تُقْرَأُ فِيهِ سُورَةُ الْبَقَرَةِ، وَإِنَّ أصفْرَ الْبُيُوتِ، الجَوْفُ الصِّفْر مِنْ كِتَابِ اللَّهِ.
রাসূল সা. বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কাউকে যেন এরূপ না পাই যে, সে এক পায়ের উপর অন্য পা ছড়িয়ে পড়তে থাকে, কিন্তু সূরা বাকারা পড়েনা। জেনে রাখো, যে ঘরে এই বরকতময় সুরাটি পাঠ করা হয়, সেখান হতে শয়তান ছুটে পালিয়ে যায়। সবচেয়ে জঘন্য ও লাঞ্ছিত সেই ঘর, যে ঘরে আল্লাহর কিতাব পাঠ করা হয়না।
عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ < فِي قَوْلِهِ تَعَالَى: ﴿وَلَقَدْ آتَيْنَاكَ سَبْعًا مِنَ الْمَثَانِي﴾ قَالَ: هِيَ السَّبْعُ الطُّوَلُ: الْبَقَرَةُ، وَآلُ عِمْرَانَ، وَالنِّسَاءُ، وَالْمَائِدَةُ، وَالْأَنْعَامُ، وَالْأَعْرَافُ، وَيُونُسُ.
সাঈদ বিন জুবাইর রা.وَلَقَدْ آتَيْنَاكَ سَبْعًا مِنَ الْمَثَانِي﴾ আয়াতের তাফসির প্রসংগে বলেনঃ এর ভাবার্থ হলো নিম্নোক্ত ৭টি সূরাঃ ১. আল–বাকারাহ, ২. আলে-ইমরান, ৩. আন-নিসা, ৪. আল-মায়িদাহ, ৫. আল–আনআম, ৬. আল–আরাফ, ৭. ইউনুস।
শানে নুযুলঃ
§ কেবলমাত্র এই আয়াতের জন্য সূনির্দিষ্ট কোন শানে নুযুল নাই।
§ সূরা আল-বাকারার অধিকাংশ আয়াত হিজরতের পর মাদানী যুগের প্রাথমিক পর্যায়ে নাযিল হয়েছে। কিছু অংশ হিজরতের অনেক পরে নাযিল হয়েছে। যে আয়াত গুলো দিয়ে সূরা শেষ হয়েছে, তা হিজরতের আগে মক্কায় নাযিল হয়েছে। বিষয়বস্তুর সাথে সম্পর্ক থাকায় সে আয়াতগুলোও এই সূরার সাথে যুক্ত করা হয়েছে।
§ কুরআনে হাকীমে এই আয়াতটির অবস্থান সূরা বাকারার ২১ নম্বর আয়াতে। এই আয়াতে আল্লাহ মানুষদেরকে তার গোলামী করার আহবান করছেন। কিন্তু এর আগে কুরআনে কি কি আলোচনা করা হয়েছে, তা আমরা একটু দেখে নেবো। যেমনঃ
1. সূরা ফাতিহাঃ যেখানে মানুষ তাদের মালিকের কাছে এমন একটি পথের সন্ধান চেয়েছিল, যা সহজ পথ–সরল পথ–যে পথ ধরে তারা তাদের বাড়ী বা তাদের বাবার বাড়ী জান্নাতে চলে যেতে পারে। এমন পথ, যে পথে চলার কারণে তাদের পূর্ববর্তীরা নিয়ামতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। এমন পথ নয়, যে পথে আল্লাহর গজবের শিকার হতে হয়।
2. সূরা আল-বাকারাহ-২ নম্বর আয়াতঃ যেখানে আল্লাহ সেই পথের সন্ধান দিয়ে বললেন, এই হলো সেই পথের মানচিত্র (Map of Jannah)–যার মাঝে কোন সন্দেহ নাই। এই মানচিত্র যারা অনুসরণ করবে, তারা তাদের বাবার বাড়ী জান্নাতে চলে যেতে পারবে।
3. সূরা আল-বাকারাহ–৩ থেকে ২০ আয়াতঃ যেখানে আল্লাহ ৩ দল মানুষের পরিচয় দিলেন। মানচিত্র অনুসরণ করে জান্নাতের পথে যারা হাটবে, তাদের সাথে তিন দল মানুষের সাক্ষাৎ মিলবে।
প্রথম দল–যারা একই গন্তব্যের যাত্রী–যারা মুমিন। এদের পরিচয় দিলেন আল্লাহ ৩–৫ মোট ৩টি আয়াতে।
দ্বিতীয় দল–যারা বিপরীত গন্তব্যের যাত্রী–যারা কাফির। এদের পরিচয় দিলেন আল্লাহ ৬ এবং ৭ মাত্র ২টি আয়াতে।
তৃতীয় দল–যাদের পরিচয়ের সূচনা করলেন আল্লাহ এই ভাবেঃ “কিছু লোক এমনও আছে যারা বলে, আমরা আল্লাহর উপর ও আখেরাতের দিনের উপর ঈমান এনেছি, অথচ আসলে তারা মু’মিন নয়”। আর এই ধরণের বিপদজনক লোকদের পরিচয় আল্লাহ দিলেন ৮–২০ মোট ১৩ আয়াতে। এরা মুনাফিক।
4. এর পর তামাম দুনিয়ার সকল মানুষদের আহবান করে আল্লাহ ডাকলেনঃ হে মানব সকল।
ব্যাখ্যাঃ
الناس মানুষ
§ মানুষ মানে পুরো মানব জাতি, সর্বস্তরের মানুষ। মুসলমান মানুষ, কাফের মানুষ, মুনাফেক মানুষ, ইহুদী মানুষ, খৃষ্টান মানুষ, সকল ধর্মের মানুষ, নাস্তিক মানুষ।
§ মানুষঃ اشرف المخلوقات সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব।
﴿وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَىٰ كَثِيرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلًا﴾
এতো আমার অনুগ্রহ, আমি বনী আদমকে মর্যাদা দিয়েছি এবং তাদেরকে জলে স্থলে সওয়ারী দান করেছি, তাদেরকে পাক-পবিত্র জিনিস থেকে রিযিক দিয়েছি এবং নিজের বহু সৃষ্টির ওপর তাদেরকে সুস্পষ্ট প্রাধান্য দিয়েছি। (বনি ইসরাঈলঃ ৭০)
§ মানুষের সৃষ্টি আদম আ. থেকে, আর আদম আ. এর সৃষ্টি মাটি থেকে।
عَن أَبِي هُرَيْرَةَ < عَن النَّبِيِّ ﷺ قَالَ لَيَنْتَهِيَنَّ أَقْوَامٌ يَفْتَخِرُونَ بِآبَائِهِمْ الَّذِينَ مَاتُوا إِنَّمَا هُمْ فَحْمُ جَهَنَّمَ أَوْ لَيَكُونُنَّ أَهْوَنَ عَلَى اللَّهِ مِنْ الْجُعَلِ الَّذِي يُدَهْدِهُ الْخِرَاءَ بِأَنْفِهِ إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَذْهَبَ عَنْكُمْ عُبِّيَّةَ الْجَاهِلِيَّةِ وَفَخْرَهَا بِالْآبَاءِ إِنَّمَا هُوَ مُؤْمِنٌ تَقِيٌّ وَفَاجِرٌ شَقِيٌّ النَّاسُ كُلُّهُمْ بَنُو آدَمَ وَآدَمُ خُلِقَ مِنْ تُرَابٍ
আবূ হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সা. বলেছেনঃ লোকেরা যেন মৃত বাপ-দাদাদের নিয়ে ফখর করা অবশ্যই ত্যাগ করে। তারা তো জাহান্নামের কয়লা মাত্র। তা ত্যাগ না করলে তারা সেই গোবুরে পোকার চেয়েও নিকৃষ্ট হবে, যে নিজ নাক দ্বারা মল ঠেলে নিয়ে যায়। অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের থেকে জাহেলিয়াতের গর্ব ও ফখর দূর করে দিয়েছেন। মানুষ হয়তো মুত্তাকী (সংযমশীল), মুমিন অথবা পাপাচারী বদমায়েশ। সকল মানুষই আদমের সন্তান এবং আদম মাটি হতে সৃষ্ট। (তিরমিযি)
§ কবরে মাটি দিতে আমরা পড়িঃ
﴿مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَىٰ﴾
এ মাটি থেকেই আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, এরই মধ্যে তোমাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো এবং এ থেকেই আবার তোমাদেরকে বের করবো। (ত্বা–হাঃ ৫০)
§ মাটির বৈশিষ্ট কি?
o মাটিঃ যা পায়ের নিচে থাকে। মানুষের পরিধানের সবচেয়ে সম্মানিত বস্তু হলো টুপি–যা মানুষের মাথায় থাকে। আর সবচেয়ে অসম্মাণিত বস্তু জুতা–যা মানুষের পায়ের নিচে থাকে। আর মাটি হলো সেই পায়ের নিচের জুতার নিচের বস্তু।
o মাটিঃ যাকে মানুষ অত্যন্ত মূল্যবান মনে করে। যার জন্য ভাইয়ে ভাইয়ে শুধু ঝগড়া নয়, খুন খারাবিও হয়ে থাকে। এক ইঞ্চি মাটি নিয়ে দেশে দেশে যুদ্ধ হয়।
o মাটিঃ যা নিয়ে কবি গান লিখেছেনঃ
ইঞ্চি ইঞ্চি মাটি, সোনার চাইতে খাটি, নগদ রক্ত দিয়ে কেনা,
শত্রু বা হানাদার, একটি কনাও তার, কেড়ে নিতে কেউ পারবে না।
ইঞ্চি ইঞ্চি মাটি, সোনার চাইতে খাটি, নগদ রক্ত দিয়ে কেনা,
কসম সেই খোদার, একটি কনাও তার, কেড়ে নিতে কেউ পারবে না।
§ মাটির তৈরী এই মানুষের অবস্থা কি?
o মানুষে মল ত্যাগের পর দূর্গন্ধ ছড়ায়, তাই মানুষের মল দেখলেই মানুষ নাকে হাত দেয়। অন্য পশুদের বেলায় তা হয় না।
o মানুষের মল মানুষ সারের জন্য ব্যবহার করে না। অন্য পশুদের মলমূত্র সারের কাজে ব্যবহৃত হয়।
o মানুষ একটা চলন্ত ডাস্টবিন। যদি কোন ভাবে এর ঢাকনা খুলে যায়, তাহলে অবস্থা বেগতিক।
§ নবীরাও আদম সন্তান, নবীদেরকেও তৈরী করা হয়েছে মাটি থেকে।
– আদম আ. যেমন মানুষ ছিলেন, সকল নবী রাসূলও মানুষ ছিলেন, আমাদের নবীও মানুষ ছিলেন। তবে উনারা সাধারণ মানুষ ছিলেন না–বরং মহামানব ছিলেনঃ
﴿وَقَالُوا مَالِ هَٰذَا الرَّسُولِ يَأْكُلُ الطَّعَامَ وَيَمْشِي فِي الْأَسْوَاقِ ۙ لَوْلَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مَلَكٌ فَيَكُونَ مَعَهُ نَذِيرًا﴾
তারা বলে, “এ কেমন রাসূল, যে খাবার খায় এবং হাটে বাজারে ঘুরে বেড়ায়? কেন তার কাছে কোন ফেরেশতা পাঠানো হয়নি, যে তার সাথে থাকতো এবং (অস্বীকারকারীদেরকে) ধমক দিতো?” (আল–ফুরকানঃ ৭)
﴿وَمَا أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ إِلَّا رِجَالًا نُّوحِي إِلَيْهِمْ ۖ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ﴾﴿وَمَا جَعَلْنَاهُمْ جَسَدًا لَّا يَأْكُلُونَ الطَّعَامَ وَمَا كَانُوا خَالِدِينَ﴾
আর হে মুহাম্মাদ! তোমার পূর্বেও আমি মানুষদেরকেই রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছিলাম, যাদের কাছে আমি অহী পাঠাতাম৷ তোমরা যদি না জেনে থাকো তাহলে আহলে কিতাবদেরকে জিজ্ঞেস করো৷ (আল–আম্বিয়াঃ ৭–৮)
﴿قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَىٰ إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ ۖ فَمَن كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا﴾
হে মুহাম্মাদ! বলো, আমি তো একজন মানুষ তোমাদেরই মতো, আমার প্রতি অহী করা হয় এ মর্মে যে, এক আল্লাহ তোমাদের ইলাহ, কাজেই যে তার রবের সাক্ষাতের প্রত্যাশী তার সৎকাজ করা উচিত এবং বন্দেগীর ক্ষেত্রে নিজের রবের সাথে কাউকে শরীক করা উচিত নয়। (আল-কাহফঃ ১১০)
صَلَّى النَّبِيُّ ﷺ…..فَلَمَّا سَلَّمَ قِيلَ لَهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَحَدَثَ فِي الصَّلاَةِ شَىْءٌ؟ قَالَ: وَمَا ذَاكَ. قَالُوا صَلَّيْتَ كَذَا وَكَذَا. فَثَنَى رِجْلَيْهِ وَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ، وَسَجَدَ سَجْدَتَيْنِ ثُمَّ سَلَّمَ، فَلَمَّا أَقْبَلَ عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ قَالَ إِنَّهُ لَوْ حَدَثَ فِي الصَّلاَةِ شَىْءٌ لَنَبَّأْتُكُمْ بِهِ، وَلَكِنْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ، أَنْسَى كَمَا تَنْسَوْنَ، فَإِذَا نَسِيتُ فَذَكِّرُونِي، وَإِذَا شَكَّ أَحَدُكُمْ فِي صَلاَتِهِ فَلْيَتَحَرَّى الصَّوَابَ، فَلْيُتِمَّ عَلَيْهِ ثُمَّ يُسَلِّمْ، ثُمَّ يَسْجُدْ سَجْدَتَيْنِ.
রাসূল সা. সালাত আদায় করলেন। …..সালাম ফিরানোর পর তাঁকে বলা হল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সালাতের মধ্যে নতুন কিছু হয়েছে কি? তিনি বললেনঃ তা কী? তাঁরা বললেনঃ আপনি তো এরূপ এরূপ সালাত আদায় করলেন। তিনি তখন তাঁর দু’পা ঘুরিয়ে কিবলামুখী হলেন। আর দু’টি সিজদা আদায় করলেন। এরপর সালাম ফিরালেন। পরে তিনি আমাদের দিকে ফিরে বললেনঃ যদি সালাত সম্পর্কে নতুন কিছু হতো, তবে অবশ্যই তোমাদের তা জানিয়ে দিতাম। কিন্তু আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুল করে থাক, আমিও তোমাদের মত ভুলে যাই। আমি কোন সময় ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দেবে। তোমাদের কেউ সালাত সম্বন্ধে সন্দেহে পতিত হলে সে যেন নিঃসন্দেহ হওয়ার চেষ্টা করে এবং সে অনুযায়ী সালাত পূর্ণ করে। তারপর সে সালাম ফিরিয়ে দু‘টি সিজদা আদায় করে। (বুখারী)
– মাটির সৃষ্টি হলে নবীর মর্যাদা বাড়ে। যেমনঃ
জ্বীন, ফেরেশতা, মানুষ–কার মর্যাদা বেশী? জ্বীন তৈরী আগুন থেকে, ফেরেশতা নূর থেকে আর মানুষ মাটি থেকে। এখন প্রশ্ন হলোঃ কাকে সেজদা করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছিল?
– মাটির তৈরী হলে মর্যাদা কমে–এটা শয়তানী কথাঃ
﴿وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ قَالَ أَأَسْجُدُ لِمَنْ خَلَقْتَ طِينًا﴾
আর স্মরণ করো, যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম, আদমকে সিজদা করো, তখন সবাই সিজদা করলো কিন্তু ইবলীস করলো না৷ সে বললো, “আমি কি তাকে সিজদা করবো, যাকে তুমি বানিয়েছো মাটি দিয়ে? (বনি ইসরাঈলঃ ৬১)
§ মানুষের শরীর মানুষের জন্য বিরাট শিক্ষাঃ
﴿لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ﴾
আমি মানুষকে পয়দা করেছি সর্বোত্তম কাঠামোয়৷ (আত–ত্বীনঃ ৪)
﴿الَّذِي خَلَقَكَ فَسَوَّاكَ فَعَدَلَكَ﴾﴿فِي أَيِّ صُورَةٍ مَّا شَاءَ رَكَّبَكَ﴾
যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, তোমাকে সুঠাম ও সুসামঞ্জস্য করে গড়েছেন এবং যে আকৃতিতে চেয়েছেন তোমাকে গঠন করেছেন৷(আল–ইনফিতারঃ ৭–৮)
– মানুষের শরীরের একেকটি অঙ্গকে বলে–Organ আর তা থেকে হয়েছে– Organization.
– মানুষের প্রতিটি Organ মিলে পুরো শরীর একটি Organization–যেখানে নেতা রয়েছে, কর্মী রয়েছে।
– মানুষকে সেই শরীর থেকে শিক্ষা নিয়ে সংগঠনের অধীনে সংঘবদ্ধ হতে হবে।
§ মানুষের মর্যাদাঃ
﴿وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَىٰ كَثِيرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلًا﴾
এতো আমার অনুগ্রহ, আমি বনী আদমকে মর্যাদা দিয়েছি এবং তাদেরকে জলে স্থলে সওয়ারী দান করেছি, তাদেরকে পাক-পবিত্র জিনিস থেকে রিযিক দিয়েছি এবং নিজের বহু সৃষ্টির ওপর তাদেরকে সুস্পষ্ট প্রাধান্য দিয়েছি৷ (বনী ইসরাঈলঃ ৭০)
o সম্মানিত মানুষকে আমরা যখন কিছু দেই, তখন সুন্দর করে প্যাকেট করে দেই।
o বনী আদমকে খাবার হিসাবে যত জিনিস দেয়া হয়েছে, সব কিছু আল্লাহ প্যাকেট করে দিয়েছেন।
§ মানুষ কিভাবে সম্মানিত ও অপমানিত হয়ঃ
﴿لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ﴾﴿ثُمَّ رَدَدْنَاهُ أَسْفَلَ سَافِلِينَ﴾﴿إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُونٍ﴾
আমি মানুষকে পয়দা করেছি সর্বোত্তম কাঠামোয়৷ তারপর তাকে উল্টো ফিরিয়ে নীচতমদেরও নীচে পৌঁছিয়ে দিয়েছি। তাদেরকে ছাড়া যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করতে থাকে৷ কেননা তাদের রয়েছে এমন পুরস্কার যা কোনদিন শেষ হবে না৷ (আত–ত্বীনঃ ৪–৬)
﴿وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ ۖ لَهُمْ قُلُوبٌ لَّا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لَّا يَسْمَعُونَ بِهَا ۚ أُولَٰئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ ۚ أُولَٰئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ﴾
আর এটি একটি অকাট্য সত্য যে, বহু জিন ও মানুষ এমন আছে যাদেরকে আমি জাহান্নামের জন্যই সৃষ্টি করেছি৷ তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা উপলব্ধি করে না৷ তাদের চোঁখ আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা দেখে না৷ তাদের কান আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা শোনে না৷ তারা পশুর মত, বরং তাদের চাইতেও অধম৷ তারা চরম গাফলতির মধ্যে হারিয়ে গেছে৷ (আল–আরাফঃ ১৭৯)
§ মানুষের ২টি কাজঃ
১. ইবাদত করা।
﴿وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ﴾
জিন ও মানুষকে আমি শুধু এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদত করবে। (আয–যারিয়াতঃ ৫৬)
(এই বিষয়ে আমরা পরবর্তীতে আলোচনা করবো)
২. খলিফার দায়িত্ব পালন করা।
﴿وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً﴾
আবার সেই সময়ের কথা একটু স্মরণ কর, যখন তোমাদের রব ফেরেশতাদের বলেছিলেন, “আমি পৃথিবীতে খলীফা-প্রতিনিধি নিযুক্ত করতে চাই৷” (আল–বাকারাহঃ ৩০)
– খলিফার দায়িত্ব আনজাম দেয় বলে মানুষের মর্যাদা এত বেশী।
– খলিফা কি? যেমন আপনিঃ
o আপনার পরিচয়, আপনি এই সংগঠনের একজন সদস্য।
o সাথে সাথে আপনার পরিচয়, আপনি অমুক শাখার সেক্রেটারী।
o সদস্য মানে আপনি তালিকাভূক্ত একজন–মানে আপনি গোলাম।
o আর সেক্রেটারী–মানে আমার একটা সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব আছে। আর তা হলোঃ খলিফা।
o ডিসি বা টিএনও–তারা নাগরিক হিসাবে নিজেরা সরকারের নিয়ম মানেন, আর সরকারের খলিফা হিসাবে তারা সকলকে সরকারের নিয়ম মানতে ভূমিকা পালন করেন এবং প্রয়োজনে জোর করে নিয়ম মানান।
– মানুষ কিভাবে এ দায়িত্ব পালন করবে–এজন্য আল্লাহ দিয়েছেন হেদায়াত।
﴿قُلْنَا اهْبِطُوا مِنْهَا جَمِيعًا ۖ فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُم مِّنِّي هُدًى فَمَن تَبِعَ هُدَايَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ﴾
আমরা বললাম, “তোমরা সবাই এখান থেকে নেমে যাও ৷ এরপর যখন আমার পক্ষ থেকে কোন হিদায়াত তোমাদের কাছে পৌছবে তখন যারা আমার সেই হিদায়াতের অনুসরণ করবে তাদের জন্য থাকবে না কোন ভয় দুঃখ বেদনা। (আল–বাকাহঃ ৩৮)
o মানুষ এক সময় জান্নাতে ছিল। জান্নাত হলো আমাদের সকলের বাপের বাড়ী বা মা–বাপের বাড়ী। মা–বাবার সম্পত্তিতে সন্তানের উত্তরাধিকার রয়েছে। আমরাও সন্তান হিসাবে জান্নাতের উত্তরাধিকারী। অতএব, আমাদের বাপের বাড়ী জান্নাত হলো আমাদের ফাইন্যাল ডেসটিনেশন। আমাদেরকে ওখানেই ফিরতে হবে।
o আবার মানুষ বেহেশতে ফেরে আসবে। আর এজন্য আল্লাহ হেদায়াত দিয়েছেন। সাথে গাইড দিয়েছেন।
§ হেদায়াত হলোঃ কিতাব–যা থিওরী–এটা একটা মানচিত্রের মতো, যা জান্নাতের পথ দেখিয়ে দেয়।
§ গাইড হলোঃ নবী ও রাসূল–যা প্রেকটিক্যাল–এটি মানচিত্র বুঝিয়ে দেয়ার মতো, যারা পুরো জিন্দেগী জান্নাতের মানচিত্র অনুযায়ী জান্নাতের পথে চলেছেন।
o যুগে যুগে গাইডরা এসে মানুষের আক্বীদা সহীহ করেছেন।
o আকীদা সহীহ করা মানে–চিন্তার বিশুদ্ধি করণ।
o সহজ কথায় চিন্তার বিশুদ্ধি করণের কাজটা হলো এই ভাবেঃ
সর্ব শ্রেণীর মানুষের নিকট ইসলামের প্রকৃতরূপ তুলে ধরে চিন্তার বিশুদ্ধিকরণ ও বিকাশ সাধনের মাধ্যমে জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইসলামের অনুসরণ করার অনুভূতি জাগ্রত করা।
اعبدوا তোমরা গোলামী করো-তোমরা ইবাদত করো
§ ইবাদত মানেঃ
১. গোলামী করা। ২. চাকুরী করা। ৩. সার্ভেন্টগিরি করা। ৪. দাসগিরি করা।
– এক কথায় নিজের যাবতীয় সত্ত্বাকে মনিবের কাছে বিসর্জন দিয়ে দেয়া। নিজের মালিকানা বিজর্জন দেয়া।
§ প্রকৃত ও নির্ভেজাল গোলাম হচ্ছেঃ
১.মনিবের দাসত্ব স্বীকার।
২.মনিবের আনুগত্য।
৩.মনিবের সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষা।
§ ভেজাল গোলাম হলঃ
১. নিজের মনিবের দাসত্বের সাথে অন্যে কারোও দাসত্ব করে।
২. নিজের মনিবের আনুগত্য করার সাথে অন্যে কারোও আনুগত্য করে।
৩. মনিবের সম্মান সম্ভ্রমের সাথে অন্যের সম্মান রক্ষা করে-স্মৃতি সৌধ বানায়, ভাষ্কর্যের নামের মুর্তি বানায়।
§ গোলাম নামধারী হল সেঃ
১. নামে গোলাম হলেও সে মনিবের দাসত্ব স্বীকার করেনা, বরং এতে মৌলবাদের গন্ধ পায়।
২. মনিবের আনুগত্য করার চিন্তাই করে না। বরং স্বার্থের জন্য হাজারও মনিবের আনুগত্য করে।
৩. মনিবের সম্মান ও মর্যাদার প্রশ্নটি তার কাছে ধর্মান্ধতা বলে মনে হয়।
§ মানুষ তৈরী করা হয়েছে কেবলমাত্র গোলামীর জন্যঃ
﴿وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ﴾
জিন ও মানুষকে আমি শুধু এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার গোলামী করবে। (আয–যারিয়াতঃ ৫৬)
﴿وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ﴾
তোমার রব ফায়সালা করে দিয়েছেনঃ তোমরা কারোর গোলামী করো না, একমাত্র তাঁরই গোলামী করো। (বনি ইসরাঈলঃ ২৩)
– অতএব মানুষ গোলামী করবে কেবলমাত্র আল্লাহর, শুধুমাত্র আল্লাহর, একমাত্র আল্লাহর।
– কেবলমাত্র নামাজ রোজা, যিকির-আজকার গোলামী নয়-বরং Total Life ই গোলামী হতে হবে।
– আমাদের গোলামী হবে নাফরমানীর সুযোগ থাকা অবস্থায় নাফরমানী না করা। যেমনঃ
o ময়না পাখি–খাচার ভিতরে থাকা অবস্থায় মালিকের নির্দেশনা অনুযায়ী কথা বলে। সেই ময়না পাখি খাচার বাহিরে গিয়ে মালিকের আনুগত্য করলে হবে প্রকৃত গোলামী।
o বাঘ–তার খাঁচার বাহিরে গিয়ে মালিকের ঘাড় মটকাবেনা, বরং আনুগত্য করবে। এমন করলে এটা হবে প্রকৃত গোলামী।
o একজন আবেদ বা গোলামঃ
১. ঘুষ খাওয়ার শক্তি ও সুযোগ আছে-কিন্তু ঘুষ খায়না।
২. সুদে অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ আছে-কিন্তু সুদে টাকা খাটায় না।
৩. যেনা করার যাবতীয় সুযোগ সুবিধা আছে- কিন্তু পর্দার বিধান মেনে চলে।
৪. দূর্নীতি করার সুযোগ ও ক্ষমতা সবই আছে–কিন্তু করেনা। বরং দৃঢ় চিত্তে ঘোষনা করে “দুই টাকার দূর্নীতিও করিনি”।
৫. তাওয়াফ ও মুজদালিফা–যেখানে আমরা প্রকৃত গোলামের চিত্র দেখতে পাই। হাজার হাজার সুন্দরী রূপবতী মহিলা চেহারা আবৃত না করে পুরুষদের সাথে সাথে তাওয়াফ করে এবং পুরুষদের সাথে সাথে খোলা আকাশের নিচে পাশাপাশি ঘুমায়। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী দেয়, আল্লাহর গোলামেরা কোন সীমা লংঘন করেনি।
§ ইবাদত কবুলের শর্তঃ
সকল ধরনের ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য দুইটি শর্ত। দুইটি শর্ত পুরণ না হলে কোন ইবাদত কখনও কবুল হবেনা। আর তা হলোঃ
১. বিশুদ্ধ নিয়াত।
২. রাসূল সা. এর তরিকা।
১. বিশুদ্ধ নিয়াত।
﴿وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ ۚ وَذَٰلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ﴾
তাদেরকে তো এ ছাড়া আর কোন হুকুম দেয়া হয়নি যে, তারা নিজেদের দীনকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদাত করবে, নামায কায়েম করবে ও যাকাত দেবে, এটিই যথার্থ সত্য ও সঠিক দীন। (আল–বাইয়্যিনাহঃ ৫)
عَنْ أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ أَبِي حَفْصٍ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ < قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ: إنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ فَهِجْرَتُهُ إلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ، وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ لِدُنْيَا يُصِيبُهَا أَوْ امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا فَهِجْرَتُهُ إلَى مَا هَاجَرَ إلَيْهِ.
আমীরুল মুমিনীন আবূ হাফস উমার ইবনু আল-খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেনঃ
আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছিঃ “সমস্ত কাজের ফলাফল নির্ভর করে নিয়তের উপর, আর প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়ত করেছে, তাই পাবে। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের জন্য হিজরত করেছে, তার হিজরত আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের দিকে হয়েছে, আর যার হিজরত দুনিয়ার (পার্থিব বস্তু) আহরণ করার জন্য অথবা কোন মহিলাকে বিয়ে করার জন্য তার হিজরত সে জন্য বিবেচিত হবে যে জন্য সে হিজরত করেছে।” (বুখারী ও মুসলিম)
عَنْ أبي هُريْرة < عَبْدِ الرَّحْمن بْنِ صخْرٍ< قَالَ: قالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: إِنَّ الله لا يَنْظُرُ إِلى أَجْسامِكْم، وَلا إِلى صُوَرِكُمْ، وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ.
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ শরীরের দিকে খেয়াল করেন না, না চেহারার দিকে। কিন্তু খেয়াল করেন মনে অবস্থার দিকে। (মুসলিম)
﴿إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا ۖ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ﴾
আমি তো একনিষ্ঠভাবে নিজের মুখ সেই সত্তার দিকে ফিরিয়ে নিয়েছি যিনি যমীন ও আসমান সৃষ্টি করেছেন এবং আমি কখনো মুশরিকদের অন্তরভুক্ত নই৷ (আল–আনআমঃ ৭৯)
﴿قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ﴾
বলো, আমার নামায, আমার আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু সবকিছু আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য। (আল–আনআমঃ ১৬২)
عن أبي أمامة < عن رسول الله ﷺ أنه قال: من أحب لله، وأبغض لله، وأعطى لله، ومنع لله فقد استكمل الإيمان.
আবু উমামাহ রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সা. বলেছেনঃ যে আল্লাহর জন্য ভালবাসলো, আল্লাহর জন্য শত্রুতা পোষন করলো, আল্লাহর জন্য কাউকে কিছু দিলো এবং আল্লাহর জন্য কাউকে কিছু দেয়া থেকে বিরত থাকলো। সে তার ঈমানকে পরিপূর্ণ করলো। (আবু দাউদ)
عن ابن عباس< عن النبي ﷺ قال :إن في جهنم لواديا تستعيذ جهنم من ذلك الوادي في كل يوم أربعمائة مرة، أعد ذلك الوادي للمرائين من أمة محمد: لحامل كتاب الله، وللمصدق في غير ذات الله، وللحاج إلى بيت الله، وللخارج في سبيل الله.
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. নবী করীম সা. থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ জাহান্নামে এমন একটি প্রান্তর আছে, যা থেকে স্বয়ং জাহান্নামই প্রতিদিন চারশত বার পানাহ চায়। এ প্রান্তরটি তৈরী করা হয়েছে উম্মতে মুহাম্মাদীর ঐ রিয়াকার লোকদের জন্য, যারা আল্লাহর কিতাবের আলীম, দান খয়রাতকারী, আল্লাহর ঘরের হাজী এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী।
(ইবনে মাজাহ–তাবরানী)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ < قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ: إِنَّ أَوَّلَ النَّاسِ يُقْضَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَيْهِ رَجُلٌ اسْتُشْهِدَ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا، قَالَ: فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ: قَاتَلْتُ فِيكَ حَتَّى اسْتُشْهِدْتُ قَالَ: كَذَبْتَ، وَلَكِنَّكَ قَاتَلْتَ لِأَنْ يُقَالَ: جَرِيءٌ، فَقَدْ قِيلَ، ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ، وَرَجُلٌ تَعَلَّمَ الْعِلْمَ وَعَلَّمَهُ وَقَرَأَ الْقُرْآنَ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ: فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ تَعَلَّمْتُ الْعِلْمَ وَعَلَّمْتُهُ، وَقَرَأْتُ فِيكَ الْقُرْآنَ، قَالَ: كَذَبْتَ، وَلَكِنَّكَ تَعَلَّمْتَ الْعِلْمَ لِيُقَالَ: عَالِمٌ وَقَرَأْتَ الْقُرْآنَ لِيُقَالَ: هُوَ قَارِئٌ، فَقَدْ قِيلَ، ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّار، وَرَجُلٌ وَسَّعَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَأَعْطَاهُ مِنْ أَصْنَافِ الْمَالِ كُلِّهِ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ: مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبِيلٍ تُحِبُّ أَنْ يُنْفَقَ فِيهَا إِلَّا أَنْفَقْتُ فِيهَا لَكَ قَالَ: كَذَبْتَ، وَلَكِنَّكَ فَعَلْتَ لِيُقَالَ: هُوَ جَوَادٌ: فَقَدْ قِيلَ، ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ ثُمَّ أُلْقِيَ فِي النَّارِ
আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সা.কে বলতে শুনেছিলঃ “নিশ্চয় সর্বপ্রথম ব্যক্তি কিয়ামতের দিন যার ওপর ফয়সালা করা হবে, সে ব্যক্তি যে শহীদ হয়েছিল। তাকে আনা হবে, অতঃপর তাকে তার (আল্লাহর) নিয়ামতরাজি জানানো হবে, সে তা স্বীকার করবে। তিনি বলবেনঃ তুমি এতে কি আমল করেছ? সে বলবেঃ আপনার জন্য জিহাদ করে এমনকি শহীদ হয়েছি। তিনি বলবেনঃ মিথ্যা বলেছ, তবে তুমি এ জন্য জিহাদ করেছ যেন বলা হয়ঃ বীর, অতএব বলা হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হবে, তাকে তার চেহারার ওপর ভর করে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। আরও এক ব্যক্তি যে ইলম শিখেছে, শিক্ষা দিয়েছে ও কুরআন তিলাওয়াত করেছে, তাকে আনা হবে। অতঃপর তাকে তার নিয়ামতরাজি জানানো হবে, সে তা স্বীকার করবে। তিনি বলবেনঃ তুমি এতে কি আমল করেছ? সে বলবেঃ আমি ইলম শিখেছি, শিক্ষা দিয়েছি ও আপনার জন্য কুরআন তিলাওয়াত করেছি। তিনি বলবেনঃ মিথ্যা বলেছ, তবে তুমি ইলম শিক্ষা করেছ যেন বলা হয়ঃ আলেম, কুরআন তিলাওয়াত করেছ যেন বলা হয়ঃ সে কারী, অতএব বলা হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হবে, তাকে চেহারার ওপর ভর করে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। আরও এক ব্যক্তি যাকে আল্লাহ সচ্ছলতা দিয়েছেন ও সকল প্রকার সম্পদ দান করেছেন, তাকে আনা হবে। তাকে তার নিয়ামতরাজি জানানো হবে, সে তা স্বীকার করবে। তিনি বলবেনঃ তুমি এতে কি আমল করেছ? সে বলবেঃ এমন খাত নেই যেখানে খরচ করা আপনি পছন্দ করেন আমি তাতে আপনার জন্য খরচ করি নাই। তিনি বলবেনঃ মিথ্যা বলেছ, তবে তুমি করেছ যেন বলা হয়ঃ সে দানশীল, অতএব বলা হয়েছে, অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হবে, তাকে তার চেহারার ওপর ভর করে টেনে-হিঁচড়ে অতঃপর জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে”। (মুসলিম ও নাসায়ী)
(আল্লাহ্ যেন আমাদের সকলকে সহীহ নিয়াতে কাজ করার তাওফীক দান করেন, আমীন।)
২. রাসূল সা. এর তরিকা।
عَنْ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ أُمِّ عَبْدِ اللَّهِ عَائِشَةَ < قَالَتْ: قَالَ: رَسُولُ اللَّهِ ﷺ مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ. وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ :مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ.
উম্মুল মু‘মিনীন আয়েশা রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেনঃ
যে আমাদের দীনের মধ্যে এমন কোন নতুন বিষয় সংযুক্ত করবে যা তার অংশ নয়, তা প্রত্যাখ্যাত হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের বর্ণনার ভাষা হলো এই যে, যে ব্যক্তি এমন কাজ করবে যা আমাদের দীনে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত হয়ে যাবে।
عن مالك بن الحويرث < أن النبي ﷺ قال: صلوا كما رأيتموني أصلي.
মালিক ইবনুল হুয়াইরিস রা. বর্ণনা করেন যে, নবী সা. বলেছেনঃ তোমরা নামায পড়ো, আমাকে যেভাবে নামায পড়তে দেখো। (বুখারী)
عن أبي هريرة < أن رسول الله ﷺ قال: من أطاعني فقد أطاع الله، ومن عصاني فقد عصى الله، ومن يطع الأمير فقد أطاعني، ومن يعص الأمير فقد عصاني .
আবু হুরায়রা রা. রাসূল সা. থেকে বর্ণনা করেন। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ যে আমার আনুগত্য করলো–সে প্রকৃত পক্ষে আল্লাহর আনুগত্য করলো এবং যে আমার নাফরমানী করলো–সে প্রকৃত পক্ষে আল্লাহর নাফরমানী করলো। আর যে আমীরের আনুগত্য করলো–সে প্রকৃতপক্ষে আমার আনুগত্য করলো। আর যে আমীরের নাফরমানী করলো–সে প্রকৃত পক্ষে আমার নাফরমানী করলো। (মুসলিম)
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ ۖ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا﴾
হে ঈমানগারগণ! আনুগত্য করো আল্লাহর এবং আনুগত্য করো রসূলের, আর সেই সব লোকের যারা তোমাদের মধ্যে দায়িত্ব ও ক্ষমতার অধিকারী৷ এরপর যদি তোমাদের মধ্যে কোন ব্যাপারে বিরোধ দেখা দেয় তাহলে তাকে আল্লাহ ও রসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও৷ যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহ ও পরকালের ওপর ঈমান এনে থাকো৷ এটিই একটি সঠিক কর্মপদ্ধতি এবং পরিণতির দিক দিয়েও এটিই উৎকৃষ্ট৷ (আন–নিসাঃ ৫৯)
﴿قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ﴾
হে নবী! লোকদের বলে দাওঃ ‘‘যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমার অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন৷ তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়৷’’ (আলে ইমরানঃ ৩১)
§ নবীরা ছিলেন আল্লাহর শ্রেষ্ঠ গোলাম।
তাই আমরা শাহাদাহ বা সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বলিঃ মুহাম্মদ সা. আল্লাহর বান্দা বা গোলাম-أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
§ সকল নবী রাসূল মানুষকে ডেকেছেন আল্লাহর গোলামীর দিকে।
﴿وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ﴾
প্রত্যেক জাতির মধ্যে আমি একজন রাসূল পাঠিয়েছি এবং তার মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি যে, “আল্লাহর বন্দেগী করো এবং তাগূতের বন্দেগী পরিহার করো৷” (আন নাহলঃ ৩৬)
﴿يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ ۖ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ﴾
হে রাসূল! তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার কাছে যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তা মানুষের কাছে পৌঁছাও৷ যদি তুমি এমনটি না করো তাহলে তোমার দ্বারা তার রিসালাতের হক আদায় হবে না৷ (আল মায়িদাহঃ ৬৭)
– নূহ আ. এর দাওয়াতঃ
﴿لَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوْمِهِ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ إِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ﴾
আমি নূহ আ. কে তাঁর কাওমের নিকট পাঠিয়েছিলাম। তিনি তাঁর কাওমকে ডাক দিয়ে বললেন, হে আমার কওম! তোমরা আল্লাহর গোলামী কর-আল্লাহ্ ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ বা প্রভূ নেই। ।(আল–আরাফঃ ৫৯)
﴿إِنَّا أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوْمِهِ أَنْ أَنذِرْ قَوْمَكَ مِن قَبْلِ أَن يَأْتِيَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ﴾﴿قَالَ يَا قَوْمِ إِنِّي لَكُمْ نَذِيرٌ مُّبِينٌ﴾﴿أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاتَّقُوهُ وَأَطِيعُونِ﴾
আমি নূহ আ. কে তার জাতির কাছে পাঠিয়েছিলাম (এ নির্দেশ দিয়ে) যে, একটি কষ্টদায়ক আযাব আসার আগেই তুমি তাদেরকে সাবধান করে দাও। সে বললো, হে আমার জাতি, আমি তোমাদের জন্য একজন সতর্ককারী (বার্তাবাহক, আমি তোমাদের জানিয়ে দিচ্ছি) যে, তোমরা আল্লাহর গোলামী করো, তাঁকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। (নূহঃ ১-৩)
– হুদ আ. এর দাওয়াতঃ
﴿وَإِلَىٰ عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًا ۗ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ ۚ أَفَلَا تَتَّقُونَ﴾
এবং আদ জাতির প্রতি আমি তাদের ভাই হুদ আ. কে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বললেন, হে আমার দেশবাসী! তোমরা আল্লাহর গোলামী কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন ইলাহ নেই। (আরাফঃ ৬৫)
– সালেহ আ. এর দাওয়াতঃ
﴿وَإِلَىٰ ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا ۗ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ﴾
এবং ছামুদ জাতির প্রতি তাদের ভাই ছালেহ আ. কে পাঠিয়েছিলাম। তিনি তার দেশবাসীকে ডাক দিয়ে বললেন, হে আমার কওমের লোকেরা! তোমরা আল্লাহর গোলামী কবুল কর। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নাই। (আরাফঃ ৭৩)
– শুয়াইর আ. এর দাওয়াতঃ
﴿وَإِلَىٰ مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا ۗ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ﴾
এবং মাদইয়ান বাসীদের প্রতি তাদেরই ভাই শোয়াইর আ. কে পাঠিয়েছিলাম। তিনি তার কওমকে ডাক দিয়ে বললেন, হে আমার কওম! তোমরা আল্লাহর গোলামী কবুল কর। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নাই। (আরাফঃ ৮৫)
– মুসা আ. এর দাওয়াতঃ
﴿وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مُوسَىٰ بِآيَاتِنَا أَنْ أَخْرِجْ قَوْمَكَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ﴾
আমি তো মুসা আ. কেও স্বীয় নিদর্শনাদিসহ পাঠিয়েছিলাম। তাকেও নির্দেশ দিয়েছিলাম যে, তুমি নিজের জাতির লোকদেরকে অন্ধকার হতে বের করে আলোর দিকে নিয়ে এসো। (ইব্রাহীমঃ ০৫)
– মুহাম্মদ সা. এর দাওয়াতঃ
يا أيُّها الناسُ قُولوا لا إلهَ إلا اللهُ، تُفلِحوا
হে মানব জাতি! তোমরা ঘোষনা কর আল্লাহ ছাড়া সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী আর কেউ নেই-তাহলে তোমরা সফল হবে। (আল-হাদীস)
﴿قُلْ هَٰذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ ۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي﴾
হে নবী! তুমি তাদের সুস্পষ্ট বলে দাও যে, এটাই আমার একমাত্র পথ, যে পথে আমি আল্লাহর দিকে আহবান জানাই প্রমাণের উপর কায়েম থেকে আমি ও আমার সংগী সাথীরা। (ইউসুফঃ ১০৮)
﴿مَا قُلْتُ لَهُمْ إِلَّا مَا أَمَرْتَنِي بِهِ أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ﴾
আপনি যা হুকুম দিয়েছিলেন, তার বাইরে আমি তাদেরকে আর কিছুই বলিনি। তা হলোঃ আল্লাহর গোলামী করো, যিনি আমারও রব এবং তোমাদেরও রব। (আল-মায়িদাহঃ ১১৭)
﴿فَأَرْسَلْنَا فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْهُمْ أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ ۖ أَفَلَا تَتَّقُونَ﴾
তারপর তাদের মধ্যে স্বয়ং তাদের সম্প্রদায়ের একজন রাসূল পাঠালাম যে তাদেরকে দাওয়াত দিল এই মর্মে যে,) আল্লাহর গোলামী করো, তোমাদের জন্য তিনি ছাড়া আর কোন মাবূদ নাই, তোমরা কি ভয় করো না? (আল-মুমিনুনঃ ৩২)
﴿وَأَنِ اعْبُدُونِي ۚ هَٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيمٌ﴾
এবং আমারই গোলামী করো, এটিই সরল-সঠিক পথ। (ইয়াসিনঃ ৬১)
﴿وَادْعُ إِلَىٰ رَبِّكَ ۖ وَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِينَ﴾
তোমার রবের দিকে দাওয়াত দাও এবং কখনো মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত হয়ো না। (কাসাসঃ ৮৭)
§ ইবাদত ২ ধরনেরঃ
১. আনুষ্ঠানিক ইবাদত।
২. অনানুষ্ঠানিক ইবাদত।
– আনুষ্ঠানিক ইবাদত অনানুষ্ঠানিক ইবাদতের ট্রেনিং।
– কেবল আনুষ্ঠানিক ইবাদত যারা করে, তারা ১০০% গোলাম নয়। যেমনঃ
o নামাজে গোলামী–সমাজে নাই। বিধায় ওরা Part time গোলাম বা Over time গোলাম।
– আনুষ্ঠানিক ইবাদতে আমরা যা বলি, অনানুষ্ঠানিক ইবাদতে তা প্রয়োগ করি যেমনঃ
o নামাজ পড়ি–সব কাজে আল্লাহর গোলামী করি।
o রোজা রাখি–ক্ষুধার্থকে খাবার দেই, সব কাজে আল্লাহকে ভয় করে চলি।
o যাকাত দেই–অন্যের হক নেই না, অন্যের সম্পদে লোভ করি না।
o হজ্জ করি–সারা বিশ্বের মুসলামাদের অবস্থা জানি, সংঘবদ্ধ জীবন যাপন করি।
§ সকল নবী এবং রাসূল সারা জীবন ইবাদত করেছেন, আর মানুষকে ইবাদত করা শিখিয়েছেন। যেমনঃ
– খাবারে ইবাদতঃ
o খাবার গ্রহণ করবো শক্তি অর্জন করার জন্য–যাতে আল্লাহর পথে সেই শক্তি দিয়ে কাজ করা যায়।
o খাবার গ্রহণ করবো রাসূলের তরিকায় بسم الله وعلى بركة الله বলে।
o ডান হাতে খাবার খাবো, রাসুলের তরিকায় বসে খাবার খাবো, চাহিদার বেশী খাবার খাবো না।
o খাবার শেষ করে রাসূলের তরিকা অনুযায়ী বলবোঃ
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ < أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ كَانَ إِذَا فَرَغَ مِنْ طَعَامِهِ قَالَ: الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَجَعَلَنَا مُسْلِمِينَ.
আবূ সা‘ঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. খানা খাওয়ার পর এরূপ দু‘আ পড়তেনঃ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَجَعَلَنَا مُسْلِمِينَ সমস্ত প্রশংসা সে আল্লাহ্র জন্য, যিনি আমাদের খাওয়ালেন, পান করালেন এবং আমাদেরকে তাঁর অনুগত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করলেন। (আবু দাউদ)
– ঘুমাতে ইবাদতঃ
o না ঘুমালে শরীর সুস্থ থাকবেনা। আর শরীর সুস্থ না থাকলে দীনের কাজ করতে পারবো না।
o ঘুমাতে যাবো–রাসূলের তরিকা মতে পশ্চিমমুখী হয়ে, ডান দিকে কাত হয়ে।
o ঘুমাতে যাবো এই দোয়া পড়েঃ اللهمَّ باسمِك أموتُ وأحيا
o ঘুম থেকে উঠে এই দোয়া পড়বোঃ الحمدُ للهِ الذي أحيانا بعد ما أماتنا وإليه النُّشورُ
– বাজারে ইবাদতঃ
o বাজারে বেশী বেশী লোকের সমাগম হয়, সালাম দেয়ার জন্য বাজারে গমন করা ইবাদত।
o দুনিয়ার সবচেয়ে খারাপ জায়গা বাজার। একথা মনে করে কেবল মাত্র প্রয়োজন সারার উদ্দেশ্যে বাজারে গমন। এই কথা মনে করে বাজারে না যাওয়াও ইবাদত।
– সন্ধিতে ইবাদতঃ
o মদীনা সনদ ইবাদত, হুদায়বিয়ার সন্ধি ইবাদত।
– যুদ্ধে ইবাদতঃ
o যুদ্ধে শহীদ হলে মর্যাদা।
o বদর, ওহুদ, খন্দক-এগুলো ইবাদত মনে করে সাহাবীরা অংশ নিয়েছিলেন।
– রাষ্ট্র পরিচালনা ইবাদতঃ
o জনকল্যানে সকল পদক্ষেপ নেয়া ইবাদত।
o প্রসাশকের অফিস করা ইবাদত।
o উমরের উক্তি ‘যদি ফুরাতের তীরে কুকুর না খেয়ে মারা যায়, তাহলে আমি উমারকে জাবাবদিহি করতে হবে-এই চেতনা ধারণ করে রাষ্ট্র পরিচালনা ইবাদত।
– পরিবারে ইবাদতঃ
o বিয়ে করার লক্ষ্যঃ আদমের সন্তান বাড়বে, রাসূলের উম্মত বাড়বে, দীনের পথে মুজাহিদ বাড়বে।
o সন্তান পালনের লক্ষ্যঃ খলিফার দায়িত্ব পালনে দাওয়াতী তৎপরতা অব্যাহত রাখা।
o ব্যবহার মার্জিত হওয়া ইবাদত।
– নবী (সা) এর উক্তি ‘প্রকাশ্যে গোপনে যা দেখ, তা মানুষকে বলে দাও’।
ربكم ie
§ রবঃ
– যিনি প্রয়োজনের আলোকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে প্রয়োজন পুরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন-তিনিই رب যেমনঃ
o ঘরের যিনি অভিভাবক তাকে বলে মুরব্বী।
o আরবীদের ঘরের বেবী কিটারকে বলে মুরব্বীয়া।
– যিনি মালিক ও প্রভূ–তাকে আমরা ডাকি রব।
o যেমন আমরা হজ্জে যাওয়ার পর কাবা ঘরের দরজায় দাড়িয়ে আল্লাহকে ডাকি- يا رب البيت হে ঘরের মালিক।
o সুরা কুরাইশে বলা হয়েছেঃ ﴿فَلْيَعْبُدُوا رَبَّ هَٰذَا الْبَيْتِ﴾ অতএব তোমরা গোলামী কর এই ঘরের মালিকের।
§ রবঃ
o এমন ক্ষমতাধর সত্তা, যখন যার যা প্রয়োজন তখন তিনি তা দিয়ে থাকেন। যিনিই প্রতিপালক তিনিই শুরুতে স্রষ্টা, পরে সংরক্ষক ও বিবর্ধক। যিনি তার অধিনস্ত প্রতিটি জিনিসের লালন–পালন করেন এবং দেখা–শুনা করেন, তদারকি থেকে সংশোধন, পরিমার্জন ও রক্ষনাবেক্ষনের সব ধরণের ব্যবস্থা পাকা–পাকি করেন। (যিলালিল কুরআন)
o রব শব্দটি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার জন্য খাছ। ওটা আর কারো জন্য ব্যবহার করা যাবেনা। তবে অন্য কারো সাথে সম্বন্ধ স্থাপনের জন্য রব শব্দ ব্যবহার করা যাবে। যেমনঃ رب الدار (ঘরের মালিক)
§ মাওলানা মাওদূদী রাহি. তার আসমাউল হুসনা ও কুরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা বইতে রব–শব্দের ৫টি অর্থ উল্লেখ করেছেনঃ
১. প্রতিপালক, প্রয়োজনীয় বস্তু সরবরাহকারী, তরবিয়াত ও ক্রমবিকাশ দাতা।
২. যিম্মাদার, তত্ত্বাবধায়ক, দেখা–শোনা এবং অবস্থার সংশোধন পরিবর্তনের দায়িত্বশীল।
৩. যিনি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেন। যাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন লোক সমবেত হয়।
৪. নেতা–সরদার, যার আনুগত্য করা হয়; ক্ষমতাশীল কর্তা ব্যক্তি, যার নির্দেশে চলে, যার কর্তৃত্ব স্বীকার করে নেয়া হয়, হস্তক্ষেপ এবং বল প্রয়োগের অধিকার আছে যার।
৫. মালিক–মুনিব।
§ কুরআনে বরঃ
নিম্নোক্ত আয়াত সমূহ তেলাওয়াত করলে আমরা উপরোক্ত ৫টি আয়াতের ভিন্ন ভিন্ন অর্থ দেখতে পাবো–কোথাও একটি অর্থ এবং কোথাও একাধিক অর্থ বর্ণনা করা হয়েছে। যেমনঃ
﴿قَالَ مَعَاذَ اللَّهِ ۖ إِنَّهُ رَبِّي أَحْسَنَ مَثْوَايَ﴾
সে (ইউসুফ) বললো, “আমি আল্লাহর আশ্রয় নিচ্ছি, আমার রব তো আমাকে ভালই মর্যাদা দিয়েছেন (আর আমি এ কাজ করবো!)৷” (ইউসুফঃ ২৩)
﴿فَإِنَّهُمْ عَدُوٌّ لِّي إِلَّا رَبَّ الْعَالَمِينَ﴾﴿الَّذِي خَلَقَنِي فَهُوَ يَهْدِينِ﴾﴿وَالَّذِي هُوَ يُطْعِمُنِي وَيَسْقِينِ﴾﴿وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ﴾
এরা তো সবাই আমার দুশমন একমাত্র রাব্বুল আলামীন ছাড়া–যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তিনিই আমাকে পথ দেখিয়েছেন৷ তিনি আমাকে খাওয়ান ও পান করান এবং রোগাক্রান্ত হলে তিনিই আমাকে রোগমুক্ত করেন। (আশ শুয়ারাঃ ৭৭–৮০)
﴿وَمَا بِكُم مِّن نِّعْمَةٍ فَمِنَ اللَّهِ ۖ ثُمَّ إِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فَإِلَيْهِ تَجْأَرُونَ﴾﴿ثُمَّ إِذَا كَشَفَ الضُّرَّ عَنكُمْ إِذَا فَرِيقٌ مِّنكُم بِرَبِّهِمْ يُشْرِكُونَ﴾
তোমরা যে নিয়ামতই লাভ করেছো তাতো আল্লাহরই পক্ষ থেকে, তারপর যখন তোমরা কোনো কঠিন সময়ের মুখোমুখি হও তখন তোমরা নিজেরাই নিজেদের ফরিয়াদ নিয়ে তাঁরই দিকে দৌঁড়াতে থাকো৷ কিন্তু যখন আল্লাহ সেই সময়কে হটিয়ে দেন, তখন সহসাই তোমাদের একটি দল নিজেদের রবের সাথে অন্যকে (এ অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে) শরীক করতে থাকে। (আন–নাহলঃ ৫৩–৫৪)
﴿قُلْ أَغَيْرَ اللَّهِ أَبْغِي رَبًّا وَهُوَ رَبُّ كُلِّ شَيْءٍ﴾
বলো, আমি কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কোন রবের সন্ধান করবো, অথচ তিনিই সকল কিছুর মালিক? (আল–আনআমঃ ১৬৪)
﴿رَّبُّ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ فَاتَّخِذْهُ وَكِيلًا﴾
তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের মালিক৷ তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই৷ তাই তাঁকেই নিজের উকীল হিসেবে গ্রহণ করো৷ (আল–মুজ্জাম্মিলঃ ৯)
﴿هُوَ رَبُّكُمْ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ﴾
তিনিই তোমাদের রব এবং তাঁরই দিকে তোমাদের ফিরে যেতে হবে৷ (হুদঃ ৩৪)
﴿ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّكُم مَّرْجِعُكُمْ﴾
অবশেষে তোমাদের সবাইকে তোমাদের রবের কাছে ফিরে যেতে হবে৷ (আয–যুমারঃ ৭)
﴿وَمَا مِن دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا طَائِرٍ يَطِيرُ بِجَنَاحَيْهِ إِلَّا أُمَمٌ أَمْثَالُكُم ۚ مَّا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِن شَيْءٍ ۚ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّهِمْ يُحْشَرُونَ﴾
ভূপৃষ্ঠে বিচরণশীল কোন প্রাণী এবং বাতাসে ডানা বিস্তার করে উড়ে চলা কোন পাখিকেই দেখ না কেন, এরা সবাই তোমাদের মতই বিভিন্ন শ্রেণী ৷ তাদের ভাগ্যলিপিতে কোন কিছু লিখতে আমি বাদ দেইনি৷ তারপর তাদের সবাইকে তাদের রবের কাছে সমবেত করা হবে। (আল–আনআমঃ ৩৮)
﴿وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَإِذَا هُم مِّنَ الْأَجْدَاثِ إِلَىٰ رَبِّهِمْ يَنسِلُونَ﴾
তারপর একটি শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে এবং সাহসা তারা নিজেদের রবের সামনে হাজির হবার জন্য নিজেদের কবর থেকে বের হয়ে পড়বে৷ (ইয়াসিনঃ ৫১)
﴿اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّهِ﴾
তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের উলামা ও দরবেশদেরকে নিজেদেরকে রবে পরিণত করেছে৷ (আত–তাওবাঃ ৩১)
﴿وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّهِ﴾
আর আমাদের কেউ আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেও নিজের রব হিসেবে গ্রহন করবে না৷ (আলে ইমরানঃ ৬৪)
﴿أَمَّا أَحَدُكُمَا فَيَسْقِي رَبَّهُ خَمْرًا ۖ وَأَمَّا الْآخَرُ فَيُصْلَبُ فَتَأْكُلُ الطَّيْرُ مِن رَّأْسِهِ ۚ قُضِيَ الْأَمْرُ الَّذِي فِيهِ تَسْتَفْتِيَانِ﴾﴿وَقَالَ لِلَّذِي ظَنَّ أَنَّهُ نَاجٍ مِّنْهُمَا اذْكُرْنِي عِندَ رَبِّكَ فَأَنسَاهُ الشَّيْطَانُ ذِكْرَ رَبِّهِ﴾
তোমাদের একজন তার নিজের প্রভু (মিশরের বাদশাহ)কে মদ পান করাবে …..আবার তাদের মধ্য থেকে যার সম্পর্কে ধারণা ছিল যে, সে মুক্তি পাবে ইউসুফ তাকে বললোঃ “তোমার প্রভু (মিসরের বাদশাহ) কে আমার কথা বলো৷” কিন্তু শয়তান তাকে এমন গাফেল করে দিল যে, সে তার প্রভু (মিসরের বাদাশাহ) কে তার কথা বলতে ভুলে গেলো৷ (ইউসুফঃ ৪১–৪২)
﴿فَلَمَّا جَاءَهُ الرَّسُولُ قَالَ ارْجِعْ إِلَىٰ رَبِّكَ فَاسْأَلْهُ مَا بَالُ النِّسْوَةِ اللَّاتِي قَطَّعْنَ أَيْدِيَهُنَّ ۚ إِنَّ رَبِّي بِكَيْدِهِنَّ عَلِيمٌ﴾
কিন্তু বাদশাহর দূত যখন ইউসুফের কাছে পৌঁছলো-তখন সে বললো, তোমার প্রভুর কাছে ফিরে যাও এবং তাকে জিজ্ঞেস করো, যে মহিলারা হাত কেটে ফেলেছিল তাদের ব্যাপারটা কি? আমার রব তো তাদের চক্রান্ত সম্পর্কে অবগত৷ (ইউসুফঃ ৫০)
﴿فَلْيَعْبُدُوا رَبَّ هَٰذَا الْبَيْتِ﴾﴿الَّذِي أَطْعَمَهُم مِّن جُوعٍ وَآمَنَهُم مِّنْ خَوْفٍ﴾
কাজেই তাদের এই ঘরের রবের ইবাদাত করা উচিত, যিনি তাদেরকে ক্ষুধা থেকে রেহাই দিয়ে খাবার দিয়েছেন এবং ভীতি থেকে নিরাপত্তা দান করেছেন৷ (কুরাইশঃ ৩–৪)
﴿سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُونَ﴾
তারা যেসব কথা তৈরি করছে তা থেকে পাক-পবিত্র তোমার রব, তিনি মর্যাদার অধিকারী। (আস–সাফ্ফাতঃ ১৮০)
﴿فَسُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا يَصِفُونَ﴾
কাজেই এরা যেসব কথা বলে বেড়াচ্ছে আরশের রব আল্লাহ তা থেকে পাক-পবিত্র৷ (আল–আম্বিয়াঃ ২২)
﴿قُلْ مَن رَّبُّ السَّمَاوَاتِ السَّبْعِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ﴾
তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, সাত আসমান ও মহান আরশের রব (অধিপতি) কে? (আল–মুমিনুনঃ ৮৬)
﴿رَّبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَرَبُّ الْمَشَارِقِ﴾
যিনি পৃথিবী ও আকাশমণ্ডলীর এবং পৃথিবী ও আকাশের মধ্যে যা কিছু আছে তাদের সবার রব (মালিক) এবং সমস্ত উদয়স্থলের রব (মালিক)। (আস–সাফ্ফাতঃ ৫)
﴿وَأَنَّهُ هُوَ رَبُّ الشِّعْرَىٰ﴾
আর তিনিই তো শিয়রা (নক্ষত্র বিশেষের নাম) – এর মালিক–রব। (আন–নাজমঃ ৪৯)
خلقكم m„wóKZ©v-mªóv
§ সৃষ্টি কিভাবে করেছেনঃ
১. মাটি থেকে আদমকে সৃষ্টি করেছেনঃ
﴿وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ﴾
আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি শুকনো ঠন্ঠনে পচা মাটি থেকে৷ (আল-হিজরঃ ২৬)
﴿قَالَ لَمْ أَكُن لِّأَسْجُدَ لِبَشَرٍ خَلَقْتَهُ مِن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ﴾
সে জবাব দিল, “এমন একটি মানুষকে সিজদা করা আমার মনোপূত নয় যাকে তুমি শুকনো ঠন্ঠনে পচা মাটি থেকে সৃষ্টি করেছো৷” (আল-হিজরঃ ৩৩)
﴿وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ قَالَ أَأَسْجُدُ لِمَنْ خَلَقْتَ طِينًا﴾
আর স্মরণ করো, যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম, আদমকে সিজদা করো, তখন সবাই সিজদা করলো কিন্তু ইবলীস করলো না৷ সে বললো, “আমি কি তাকে সিজদা করবো যাকে তুমি বানিয়েছো মাটি দিয়ে? (বনি ইসরাঈলঃ ৬১)
﴿هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن طِينٍ ثُمَّ قَضَىٰ أَجَلًا ۖ وَأَجَلٌ مُّسَمًّى عِندَهُ ۖ ثُمَّ أَنتُمْ تَمْتَرُونَ﴾
তিনিই তো তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে৷ তারপর তোমাদের জন্য নির্ধারিত করেছেন জীবনের একটি সময়সীমা এবং আর একটি সময়সীমাও আছে, যা তাঁর কাছে স্থিরীকৃত, কিন্তু তোমরা কেবল সন্দেহেই লিপ্ত রয়েছে৷ (আল–আনআমঃ ২)
﴿مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَىٰ﴾
এ মাটি থেকেই আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, এরি মধ্যে তোমাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো এবং এ থেকেই আবার তোমাদেরকে বের করবো। (ত্বা–হাঃ ৫৫)
২. আদমের পাঁজর থেকে হাওয়াকে সৃষ্টি করেছেনঃ
﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا﴾
হে মানব জতি! তোমাদের রবকে ভয় করো৷ তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একটি প্রাণ থেকে৷ আর সেই একই প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন তার জোড়া৷ তারপর তাদের দুজনার থেকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী৷ সেই আল্লাহকে ভয় করো যার দোহাই দিয়ে তোমরা পরস্পরের কাছ থেকে নিজেদের হক আদায় করে থাকো এবং আত্মীয়তা ও নিকট সম্পর্ক বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকো৷ নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, আল্লাহ তোমাদের ওপর কড়া নজর রেখেছেন। (আন–নিসাঃ ১)
﴿هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ إِلَيْهَا ۖ فَلَمَّا تَغَشَّاهَا حَمَلَتْ حَمْلًا خَفِيفًا فَمَرَّتْ بِهِ ۖ فَلَمَّا أَثْقَلَت دَّعَوَا اللَّهَ رَبَّهُمَا لَئِنْ آتَيْتَنَا صَالِحًا لَّنَكُونَنَّ مِنَ الشَّاكِرِينَ﴾
আল্লাহই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একটি মাত্র প্রাণ থেকে এবং তারই প্রজাতি থেকে তার জুড়ি বানিয়েছেন, যাতে করে তার কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পা৷ তারপর যখন পুরুষ নারীকে ঢেকে ফেলে তখন সে হালকা গর্ভধারণ করে৷ তাকে বহন করে সে চলাফেরা করে৷ গর্ভ যখন ভারি হয়ে যায় তখন তারা দুজনে মিলে এক সাথে তাদের রব আল্লাহর কাছে দোয়া করেঃ যদি তুমি আমাদের একটি ভাল সন্তান দাও তাহলে আমরা তোমার শোকরগুজারী করবো। (আল–আরাফঃ ১৮৯)
﴿خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَأَنزَلَ لَكُم مِّنَ الْأَنْعَامِ ثَمَانِيَةَ أَزْوَاجٍ ۚ يَخْلُقُكُمْ فِي بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ خَلْقًا مِّن بَعْدِ خَلْقٍ فِي ظُلُمَاتٍ ثَلَاثٍ ۚ ذَٰلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُ ۖ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ فَأَنَّىٰ تُصْرَفُونَ﴾
তিনি তোমাদের একটি প্রাণী থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকে তার জোড়াও সৃষ্টি করেছেন৷ আর তিনিই তোমাদের জন্য চতুস্পদ জন্তুর আটজোড়া নর ও মাদি সৃষ্টি করেছেন৷ তিনি তোমাদেরকে মায়ের গর্ভে তিন তিনটে অন্ধকার পর্দার অভ্যন্তরে একের পর এক আকৃতি দান করে থাকেন৷ এ আল্লাহই (যার এ কাজ) তোমাদের ‘রব’ তিনিই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী, তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই, তা সত্ত্বেও তোমাদেরকে কোন্দিকে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে। (আয–যমারঃ ৬)
৩. আদম ও হাওয়া থেকে পুরো পৃথিবীর মানুষ সৃষ্টি করেছেনঃ
﴿خَلَقَ الْإِنسَانَ مِن نُّطْفَةٍ فَإِذَا هُوَ خَصِيمٌ مُّبِينٌ﴾
তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ছোট্ট একটি ফোঁটা থেকে৷ তারপর দেখতে দেখতে সে এক কলহপ্রিয় ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছে৷ (আন নাহলঃ ৪)
৪. পিতা ছাড়া ঈসা আ.কে মারিয়ামের গর্ভে সৃষ্টি করেছেনঃ
﴿إِذْ قَالَتِ الْمَلَائِكَةُ يَا مَرْيَمُ إِنَّ اللَّهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍ مِّنْهُ اسْمُهُ الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ وَجِيهًا فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَمِنَ الْمُقَرَّبِينَ﴾﴿وَيُكَلِّمُ النَّاسَ فِي الْمَهْدِ وَكَهْلًا وَمِنَ الصَّالِحِينَ﴾﴿قَالَتْ رَبِّ أَنَّىٰ يَكُونُ لِي وَلَدٌ وَلَمْ يَمْسَسْنِي بَشَرٌ ۖ قَالَ كَذَٰلِكِ اللَّهُ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ ۚ إِذَا قَضَىٰ أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُ كُن فَيَكُونُ﴾
যখন ফেরেশতারা বললঃ ‘‘হে মারইয়াম! আল্লাহ তোমাকে তাঁর একটি ফরমানের সুসংবাদ দান করেছেন৷ তার নাম হবে মসীহ ঈসা ইবনে মারইয়াম৷ সে দুনিয়ায় ও আখেরাতে সম্মানিত হবে৷ আল্লাহর নৈকট্যলাভকারী বান্দাদের অন্তরভুক্ত হবে৷ দোলনায় থাকা অবস্থায় ও পরিণত বয়সেও মানুষের সাথে কথা বলবে এবং সে হবে সৎব্যক্তিদের অন্যতম৷’’ একথা শুনে মারইয়াম বললোঃ ‘‘হে আমার প্রতিপালক! আমার সন্তান কেমন করে হবে? আমাকে তো কোন পুরুষ স্পর্শও করেনি৷’’ জবাব এলোঃ ‘‘এমনটিই হবে।” আল্লাহ যা চান সৃষ্টি করেন৷ তিনি যখন কোন কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন তখন কেবল এতটুকুই বলেন, হয়ে যাও, তাহলেই তা হয়ে যায়। (আল–বাকারাহঃ ৪৫–৪৭)
﴿إِنَّ مَثَلَ عِيسَىٰ عِندَ اللَّهِ كَمَثَلِ آدَمَ ۖ خَلَقَهُ مِن تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُ كُن فَيَكُونُ﴾
আল্লাহর কাছে ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের মতো৷ কেননা আল্লাহ তাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেন এবং হুকুম দেনঃ হয়ে যাও, আর তা হয়ে যায়৷ (আলে ইমরানঃ ৫৯)
§ মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে এমন অবস্থায় যে তারা কিছু জানতো নাঃ
﴿وَاللَّهُ أَخْرَجَكُم مِّن بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ لَا تَعْلَمُونَ شَيْئًا وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ ۙ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ﴾
আল্লাহ তোমাদের মায়ের পেট থেকে তোমাদের বের করেছেন এমন অবস্থায় যখন তোমরা কিছুই জানতে না৷ তিনি তোমাদের কান দিয়েছেন, চোখ দিয়েছেন, চিন্তা-ভাবনা করার মতো হৃদয় দিয়েছেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। (আন–নাহলঃ ৭৮)
﴿وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُن تَعْلَمُ﴾
এমন সব বিষয় তোমাকে শিখিয়েছেন যা তোমার জানা ছিল না। (আন–নিসাঃ ১১৩)
§ উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানলামঃ
– মানুষ তুমি গোলামী করো সেই সত্ত্বার, যিনি সৃষ্টি না করলে তোমার কোন অস্থিত্বই থাকতো না। যিনি সৃষ্টি না করলে এখন তুমি পৃথিবীর বুকে যে বুক ফুলিয়ে চলছো, তা করতে পারতে না। যিনি তোমাকে অজানা অবস্থায় সৃষ্টি করেছেন, অথচ তুমি অনেক জানো বলে মনে করছো।
– মানুষ যখন রুহের জগতে ছিল, তখন আল্লাহ প্রশ্ন করেছিলেনঃ ﴿أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ﴾ আমি কি তোমাদের মালিক নই। তখন আমরা বলেছিলামঃ ﴿قَالُوا بَلَىٰ ۛ شَهِدْنَا﴾ হ্যাঁ, অবশ্যই আপনি আমাদের মালিক আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি। সেই সাক্ষ্য অনুযায়ী আমরা নিজেদের পরিচয় ঠিক করে দিয়েছি যে, আমরা হলাম গোলাম–মালিক নই। অতএব, এখন দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ এই কথাই স্মরণ করে দিচ্ছেনঃ যেহেতু তোমরা মালিক নও, বরং গোলাম। সেহেতু এখন গোলামী করো-দুনিয়ার জীবনে মালিক হয়ে যেও না।
تتقون gyËvKx
§ তাকওয়া কি ?
– তাকওয়া (تقوى) শব্দটির উৎপত্তি (وقاية) হতে।
– আভিধানিক অর্থঃ ভয় করা, বিরত থাকা, রক্ষা করা, সাবধান হওয়া, আত্মশুদ্ধি, পরহেযগারী।
§ তাকওয়ার সংজ্ঞাঃ
– নিজেকে যে কোনো বিপদ থেকে সম্ভাব্য সকল উপায়ে বাঁচিয়ে রাখা বা কোনো অনিষ্ট হতে নিজেকে দূরে রাখা ইত্যাদি ।
– সাধারণ অর্থে আল্লাহ ভীতিকে তাকওয়া বলা হয় ।
– ফারসী ভাষায় তাকওয়ার প্রতিশব্দ হচ্ছে পরহেযগারী ।
– ইসলামী পরিভাষায় ব্যক্তি ও সমষ্টিগত জীবনে ইসলামী বিধান মতে সকল প্রকার খারাপ কাজ ও চিন্তা পরিহার করে, কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশ মতো জীবন যাপনের মাধ্যমে আল্লাহকে প্রতিনিয়ত প্রেমমাখা ভয় করে চলাকে তাকওয়া বলে ।
§ তাত্ত্বিক অর্থে তাকওয়া বলা হয়ঃ
– আল্লাহ-ভীতি জনিত মানুষের মনের সে অনুভূতিকে-যা তার জীবনের সকল ক্ষেত্রে স্বতঃস্ফুর্তভাবে আত্মপ্রকাশ করে ।
– কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলেন, যে সকল ভাব, প্রবৃত্তি, কাজ পরজগতে ক্ষতিকর এবং যে সমস্ত কার্যকলাপ দৃশ্যতঃ বৈধ বলে মনে হলেও পরিণতিতে মানুষের ধ্বংস ডেকে আনে, সে সকল ভাব, প্রবৃত্তি ও কার্যকলাপ হতে নিজেকে রক্ষা করার জন্যে যথাসাধ্য চেষ্টা করাকে তাকওয়া বলে। তাকওয়ার গুণে গুণান্বিত ব্যক্তিকে “মুত্তাকি” বলে যার বহুবচন মুত্তাকীন।
§ কুরআনে কারীমের বিভিন্ন বর্ণনা আমাদেরকে মুত্তাকী হওয়ার তাগিদ দেয়ঃ
﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ﴾
হে মানব জতি! তোমাদের রবকে ভয় করো৷ তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একটি প্রাণ থেকে৷ (আন–নিসাঃ ১)
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয় করো৷ মুসলিম থাকা অবস্থায় ছাড়া যেন তোমাদের মৃত্যু না হয়। (আলে ইমরানঃ ১০২)
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ﴾
হে ঈমানদাররা, আল্লাহকে ভয় করো৷ আর প্রত্যেককেই যেন লক্ষ রাখে, সে আগামীকালের জন্য কি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে৷ আল্লাহকে ভয় করতে থাক৷ আল্লাহ নিশ্চিতভাবেই তোমাদের সেই সব কাজ সম্পর্কে অবহিত যা তোমরা করে থাকো। (আল–হাশরঃ ১৮)
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا﴾﴿يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا﴾
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বলো৷ আল্লাহ তোমাদের কার্যকলাপ ঠিকঠাক করে দেবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ মাফ করে দেবেন৷ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে সে বড় সাফল্য অর্জন করে। (আল–আহযাবঃ ৭০–৭১)
﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا ۚ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ﴾
হে মানব জাতি, আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ এবং একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি৷ তারপর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত করে দিয়েছি, যাতে তোমরা পরস্পরকে চিনতে পার৷ তোমাদের মধ্যে যে অধিক আল্লাহভীরু সে-ই প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কাছে অধিক মর্যাদার অধিকারী৷ নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও সবকিছু সম্পর্কে অবহিত। (আল–হুজুরাতঃ ১৩)
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ﴾
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সহযোগি হও। (আত তাওবাঃ ১১৯)
﴿وَمِنَ النَّاسِ وَالدَّوَابِّ وَالْأَنْعَامِ مُخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ كَذَٰلِكَ ۗ إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ﴾
আর এভাবে মানুষ, জীব-জনোয়ার ও গৃহপালিত জন্তুও বিভিন্ন বর্ণের রয়েছে৷ আসল ব্যাপার হচ্ছে, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে একমাত্র জ্ঞান সম্পন্নরাই তাকে ভয় করে৷ নিসন্দেহে আল্লাহ পরাক্রমশালী এবং ক্ষমাশীল৷ (ফাতিরঃ ২৮)
﴿إِنَّ اللَّهَ مَعَ الَّذِينَ اتَّقَوا وَّالَّذِينَ هُم مُّحْسِنُونَ﴾
আল্লাহ তাদের সাথে আছেন যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মপরায়ণ৷ (আন–নাহলঃ ১২৮)
﴿وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَخْشَ اللَّهَ وَيَتَّقْهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَائِزُونَ﴾
আর সফলকাম তারাই যারা আল্লাহ ও রাসূলের হুকুম মেনে চলে এবং আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর নাফরমানী করা থেকে দূরে থাকে৷ (আন–নূরঃ ৫২)
﴿مَّا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَىٰ رَسُولِهِ مِنْ أَهْلِ الْقُرَىٰ فَلِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ وَلِذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَابْنِ السَّبِيلِ كَيْ لَا يَكُونَ دُولَةً بَيْنَ الْأَغْنِيَاءِ مِنكُمْ ۚ وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ﴾
এসব জনপদের দখলমুক্ত করে যে জিনিসই আল্লাহ তাঁর রাসূলকে ফিরিয়ে দেন তা আল্লাহ, রাসূল, আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন এবং মুসাফিরদের জন্য৷ যাতে তা তোমাদের সম্পদশালীদের মধ্যেই কেবল আবর্তিত হতে না থাকে৷ রাসূল যা কিছু তোমাদের দেন তা গ্রহণ করো এবং যে জিনিস থেকে তিনি তোমাদের বিরত রাখেন তা থেকে বিরত থাকো৷ আল্লাহকে ভয় করো৷ আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা৷ (আল–হাশরঃ ৭)
﴿إِنَّ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُم بِالْغَيْبِ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ كَبِيرٌ﴾
যারা না দেখেও তাদের রবকে ভয় করে, নিশ্চয়ই তারা লাভ করবে ক্ষমা এবং বিরাট পুরষ্কার৷ (আল–মুলকঃ ১২)
﴿يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ اتَّقِ اللَّهَ وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِينَ وَالْمُنَافِقِينَ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا﴾
হে নবী! আল্লাহকে ভয় করো এবং কাফের ও মুনাফিকদের আনুগত্য করো না৷ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই সর্বজ্ঞ ও মহাজ্ঞানী৷ (আল–আহযাবঃ ১)
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ﴾
হে ঈমানদানগণ! সবরের পথ অবলম্বন করো, বাতিলপন্থীদের মোকাবলায় দৃঢ়তা দেখাও, হকের খেদমত করার জন্য উঠে পড়ে লাগো এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাকো৷ আশা করা যায়, তোমরা সফলকাম হবে৷ (আলে ইমরানঃ ২০০)
﴿فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَاسْمَعُوا وَأَطِيعُوا وَأَنفِقُوا خَيْرًا لِّأَنفُسِكُمْ ۗ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ﴾
তাই যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় করে চলো৷ শোন, আনুগত্য করো এবং নিজেদের সম্পদ ব্যয় করো৷ এটা তোমাদের জন্যই ভাল৷ যে মনের সংকীর্নতা থেকে মুক্ত থাকলো সেই সফলতা লাভ করবে৷ (আত–তাগাবুনঃ ১৬)
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُحِلُّوا شَعَائِرَ اللَّهِ وَلَا الشَّهْرَ الْحَرَامَ وَلَا الْهَدْيَ وَلَا الْقَلَائِدَ وَلَا آمِّينَ الْبَيْتَ الْحَرَامَ يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّن رَّبِّهِمْ وَرِضْوَانًا ۚ وَإِذَا حَلَلْتُمْ فَاصْطَادُوا ۚ وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ أَن صَدُّوكُمْ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ أَن تَعْتَدُوا ۘ وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ﴾
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর আনুগত্য ও ভক্তির নিদর্শনগুলোর অমর্যাদা করো না৷ হারাম মাসগুলোর কোনটিকে হালাল করে নিয়ো না৷ কুরবানীর পশুগুলোর ওপর হস্তক্ষেপ করো না৷ যেসব পশুর গলায় আল্লাহর জন্য উৎর্গীত হবার আলামত স্বরূপ পট্টি বাঁধা থাকে তাদের উপরও হস্তক্ষেপ করো না৷ আর যারা নিজেদের রবের অনুগ্রহ ও তাঁর সন্তুষ্টির সন্ধানে সম্মানিত গৃহের (কাবা) দিকে যাচ্ছে তাদেরকেও উত্যক্ত করো না৷ হাঁ, ইহরামের অবস্থা শেষ হয়ে গেলে আবশ্যি তোমরা শিকার করতে পারো৷ আর দেখো, একটি দল তোমাদের জন্য মসজিদুল হারামের পথ বন্ধ করে দিয়েছে, এ জন্য তোমাদের ক্রোধ যেন তোমাদেরকে এতখানি উত্তেজিত না করে যে, তাদের বিরুদ্ধে তোমরা অবৈধ বাড়াবাড়ি করতে শুরু করো৷ নেকী ও আল্লাহভীতির সমস্ত কাজে সবার সাথে সহযোগীতা করো এবং গুনাহ ও সীমালংঘনের কাজে কাউকে সহযোগীতা করো না৷ আল্লাহকে ভয় করো৷ তাঁর শাস্তি বড়ই কঠোর৷ (আল–মায়িদাহঃ ২)
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ وَجَاهِدُوا فِي سَبِيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ﴾
হে ঈমানদারগণ ! আল্লাহকে ভয় করো, তাঁর দরবারে নৈকট্যলাভের উপায় অনুসন্ধান করো এবং তাঁর পথে প্রচেষ্টা ও সাধনা করো, সম্ভবত তোমরা সফলকাম হতে পারবে৷ (আল–মায়িদাঃ ৩৫)
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا تَنَاجَيْتُمْ فَلَا تَتَنَاجَوْا بِالْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَمَعْصِيَتِ الرَّسُولِ وَتَنَاجَوْا بِالْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন পরস্পরে গোপন আলাপ-আলোচনায় লিপ্ত হও তখন পাপ, জুলুম ও রাসূলের অবাধ্যতার কথা বলাবলি করো না, বরং সততা ও আল্লাহভীতির কথাবার্তা বল এবং যে আল্লাহর কাছে হাশরের দিন তোমাদের উপস্থিত হতে হবে, তাঁকে ভয় কর৷ (আল–মুজাদালাহঃ ৯)
﴿وَإِنَّ هَٰذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاتَّقُونِ﴾
আর তোমাদের এ উম্মত হচ্ছে একই উম্মত এবং আমি তোমাদের রব, কাজেই আমাকেই তোমরা ভয় করো ৷ (আল–মুমিনুনঃ ৫২)
﴿أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ قِيلَ لَهُمْ كُفُّوا أَيْدِيَكُمْ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ فَلَمَّا كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقِتَالُ إِذَا فَرِيقٌ مِّنْهُمْ يَخْشَوْنَ النَّاسَ كَخَشْيَةِ اللَّهِ أَوْ أَشَدَّ خَشْيَةً ۚ وَقَالُوا رَبَّنَا لِمَ كَتَبْتَ عَلَيْنَا الْقِتَالَ لَوْلَا أَخَّرْتَنَا إِلَىٰ أَجَلٍ قَرِيبٍ ۗ قُلْ مَتَاعُ الدُّنْيَا قَلِيلٌ وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ لِّمَنِ اتَّقَىٰ وَلَا تُظْلَمُونَ فَتِيلًا﴾
তোমরা কি তাদেরকেও দেখেছো, যাদেরকে বলা হয়েছিল, তোমাদের হাত গুটিয়ে রাখো এবং নামায কায়েম করো ও যাকাত দাও? এখন তাদেরকে যুদ্ধের হুকুম দেয়ায় তাদের একটি দলের অবস্থা এই দাঁড়িয়েছে যে, তারা মানুষকে এমন ভয় করেছে যেমন আল্লাহকে ভয় করা উচিত অথবা তার চেয়েও বেশী৷ তারা বলছেঃ হে আমাদের রব! আমাদের জন্য এই যুদ্ধের হুকুমনামা কেন লিখে দিলে? আমাদের আরো কিছু সময় অবকাশ দিলে না কেন? তাদেরকে বলোঃ দুনিয়ার জীবন ও সম্পদ অতি সামান্য এবং একজন আল্লাহর ভয়ে ভীত মানুষের জন্য আখেরাতই উত্তম৷ আর তোমাদের ওপর এক চুল পরিমাণও জুলুম করা হবে না৷ (আন–নিসাঃ ৭৭)
﴿وَاتَّقُوا يَوْمًا لَّا تَجْزِي نَفْسٌ عَن نَّفْسٍ شَيْئًا وَلَا يُقْبَلُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلَا تَنفَعُهَا شَفَاعَةٌ وَلَا هُمْ يُنصَرُونَ﴾
আর সেই দিনকে ভয় করো, যেদিন কেউ কারো কোন কাজে আসবে না, কারোর থেকে ফিদিয়া (বিনিময়) গ্রহণ করা হবে না, কোন সুপারিশ মানুষের জন্য লাভজনক হবে না এবং অপরাধীরা কোথাও কোন সাহায্য পাবে না ৷ (আল–বাকারাহঃ ১২৩)
﴿يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْأَهِلَّةِ ۖ قُلْ هِيَ مَوَاقِيتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ ۗ وَلَيْسَ الْبِرُّ بِأَن تَأْتُوا الْبُيُوتَ مِن ظُهُورِهَا وَلَٰكِنَّ الْبِرَّ مَنِ اتَّقَىٰ ۗ وَأْتُوا الْبُيُوتَ مِنْ أَبْوَابِهَا ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ﴾
লোকেরা তোমাকে চাঁদ ছোট বড়ো হওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছে৷ বলে দাওঃ এটা হচ্ছে লোকদের জন্য তারিখ নির্ণয় ও হজ্জের আলামত তাদেরকে আরো বলে দাওঃ তোমাদের পেছন দিক দিয়ে গৃহে প্রবেশ করার মধ্যে কোন নেকী নেই৷ আসলে নেকী রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে বাঁচার মধ্যেই, কাজেই তোমরা দরজা পথেই নিজেদের গৃহে প্রবেশ করো৷ তবে আল্লাহকে ভয় করতে থাকো, হয়তো তোমরা সাফল্য লাভে সক্ষম হবে ৷ (আল–বাকারাহঃ ১৮৯)
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَآمِنُوا بِرَسُولِهِ يُؤْتِكُمْ كِفْلَيْنِ مِن رَّحْمَتِهِ وَيَجْعَل لَّكُمْ نُورًا تَمْشُونَ بِهِ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ۚ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ﴾
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর রাসুল (মুহাম্মাদ সা.) এর ওপর ঈমান আনো৷ তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে দ্বিগুণ রহমত দান করবেন, তোমাদেরকে সেই জ্যোতি দান করবেন যার সাহায্যে তোমরা পথ চলবে এবং তোমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি মাফ করে দেবেন৷ আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু৷ (আল–হাদীদঃ ২৮)
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ﴾
হে মু’মিনগণ! আল্লাহ ও তাঁর রসূলের চেয়ে অগ্রগামী হয়ো না৷ আল্লাহকে ভয় করো৷ আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও জানেন৷ (আল–হুজুরাতঃ ১)
§ তাকওয়া সম্পর্কে হাদীসে রাসূলে যে বক্তব্য পাওয়া যায়ঃ
আতিয়া আস সাদী রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূল সা. বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ার আশংকায় যে সব কাজে গুনাহ নাই তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত আল্লাহভীরু লোকদের অন্তর্ভূক্ত হতে পারে না। (তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ)
عن عائشة < أن النبي ﷺ قال لها: يا عائشة إياك ومحقرات الذنوب فإن لها من الله طالباً.
আয়েশা রা. হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, হে আয়েশা, ছোটখাট গুনাহের ব্যাপারে সতর্ক হও। কেননা এ জন্যও আল্লাহর নিকট জবাবহিতি করতে হবে। (ইবনে মাজাহ)
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ < قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ “إِنَّهُ لَيْسَ شَيْءٌ يُقَرِّبُكُمْ مِنَ الْجَنَّةِ، وَيُبَاعِدُكُمْ مِنَ النَّارِ إِلَّا قَدْ أَمَرْتُكُمْ بِهِ، وَلَيْسَ شَيْءٌ يُقَرِّبُكُمْ مِنَ النَّارِ، وَيُبَاعِدُكُمْ مِنَ الْجَنَّةِ إِلَّا قَدْ نَهَيْتُكُمْ عَنْهُ، وَأَنَّ الرُّوحَ الْأَمِينَ نَفَثَ فِي رُوعِيَ أَنَّهُ لَنْ تَمُوتَ نَفْسٌ حَتَّى تَسْتَوْفِيَ رِزْقَهَا، فَاتَّقُوا اللهَ وَأَجْمِلُوا فِي الطَّلَبِ، وَلَا يَحْمِلَنَّكُمُ اسْتِبْطَاءُ الرِّزْقِ أَنْ تَطْلُبُوهُ بِمَعَاصِي اللهِ، فَإِنَّهُ لَا يُدْرَكُ مَا عِنْدَ اللهِ إِلَّا بِطَاعَتِهِ.
ইবনে মাসুদ রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ আল্লাহর নির্ধারিত রিযিক পূর্ণ মাত্রায় লাভ না করা পর্যন্ত কোন লোকই মারা যাবে না। সাবধান! আল্লাহকে ভয় কর এবং বৈধ পন্থায় আয় উপার্জনের চেষ্টা কর। রিযিকপ্রাপ্তিতে বিলম্ব যেন তোমাদেরকে অবৈধ পন্থা অবলম্বনে প্ররোচিত না করে। কেননা আল্লাহর কাছে যা কিছু রয়েছে তা কেবল আনুগত্যের মাধ্যমে লাভ করা যায়। (ইবনে মাজাহ)
عن أبي هريرة < قال: قال رسول الله ﷺ المسلم أخو المسلم، لا يظلمه، ولا يخذله، ولا يكذبه، ولا يحقره، التقوى هاهنا، ويشير إلى صدره الشريف ثلاث مرات، بحسب امرئ من الشر أن يحقر أخاه المسلم، كل المسلم على المسلم حرام: دمه وماله وعرضه.
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার উপর যুলুম করবে না, তাকে অসহায় অবস্থায় পরিত্যাগ ও করবে না এবং তাকে তুচ্ছ জ্ঞান করবে না। তিনি নিজের বুকের দিকে ইশারা করে বলেন, তাকওয়া এখানে, তাকওয়া এখানে, তাকওয়া এখানে। কোন লোকের নিকৃষ্ট সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ জ্ঞান করে। প্রতিটি মুসলমানের জীবন, ধন-সম্পদ ও মান-সম্মান সকল মুসলমানের সম্মানের বস্তু (এর উপর হস্তক্ষেপ করা তাদের জন্য হারাম)। (মুসলিম)
عن الحسن بن علي < قال: حفظت من رسول الله ﷺ دع ما يريبك إلى ما لايريبك فإن الصدق طمأنينة والكذب ريبة.
হাসান ইবনে আলী রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা. এর জবান মুবারক হতে এই কথা মুখস্ত করে নিয়েছি, যে জিনিস সংশয়ের মধ্যে ফেলে দেয় তা পরিত্যাগ করে যা সন্দেহের উর্ধে তা গ্রহণ কর। কেননা সততাই শান্তির বাহন এবং মিথ্যাচার সন্দেহ সংশয়ের উৎস। (তিরমিযী)
وعن أبي ذر < دخلت على رسول الله ﷺ فذكر الحديث بطوله إلى أن قال: قلت: يا رسول الله أوصني، قال: أوصيك بتقوى الله، فإنه أزين لأمرك كله، قلت: زدني. قال: عليك بتلاوة القرآن وذكر الله عز وجل، فإنه ذكر لك في السماء، ونور لك في الأرض. قلت: زدني. قال: عليك بطول الصمت، فإنه مطردة للشيطان وعون لك على أمر دينك، قلت: زدني. قال إياك وكثرة الضحك، فإنه يميت القلب ويذهب بنور الوجه، قلت: زدني. قال: قل الحق وإن كان مرا. قلت: زدني. قال: لا تخف في الله لومة لائم، قلت: زدني. قال: ليحجزك عن الناس ما تعلم من نفسك.
আবু যার গিফারী রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি একদা রাসুলুল্লাহ সা. এর খেদমতে হাজির হলাম। অতঃপর (আবুযার, নতুন তাঁর নিকট হতে হাদীসের শেষের দিকের কোন বর্ণনাকারী) একটি দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেন। (এ হাদীস এখানে বর্ণনা করা হয়নি) এ প্রসংগে আবু যার বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে নসীহত করুন। নবী করীম সা. বললেন, আমি তোমাকে নসিহত করছি তুমি আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর। কেননা ইহা তোমার সমস্ত কাজকে সুন্দর, সুষ্ঠু ও সৌন্দর্য মন্ডিত করে দেবে। আবু যার বলেন, আমি আরো নসিহত করতে বললাম। তখন তিনি বললেন, তুমি কুরআন মজিদ তিলাওয়াত করো এবং আল্লাহকে সব সময় স্মরণ রাখবে। কেননা এ তেলাওয়াত ও আল্লাহর স্মরণের ফলেই আকাশ রাজ্যে তোমাকে স্মরণ করা হবে এবং এ যমীনেও তা তোমার নুর স্বরূপ হবে। আবু যার আবার বললেন, হে রাসূল! আমাকে আরো নসীহত করুন। তিনি বললেন, বেশীর ভাগ চুপচাপ তাকা ও যথাসম্ভব কম কথা বলার অভ্যাস কর। কেননা, এ অভ্যাস শয়তান বিতাড়নের কারণ হবে এবং দীনের ব্যাপারে ইহা তোমার সাহায্যকারী হবে। আবু যার বলেন, আমি বললাম আমাকে আরো কিছু নসিহত করুন। বললেন, বেশী হাসিও না, কেননা ইহা অন্তরকে হত্যা করে এবং মুখমন্ডলের জ্যোতি এর কারণে বিলীন হয়ে যায়। আমি বললাম, আমাকে আরো উপদেশ দিন। তিনি বললেন, সব সময়ই সত্য কথা ও হক কথা বলবে-লোকের পক্ষে তা যতই দূঃসহ ও তিক্ত হোক না কেন। বললাম আমাকে আরো নসিহত করুন। তিনি বললেন, আল্লাহর ব্যাপারে কোন উৎপীড়কের উৎপীড়নকে আদৌ ভয় করো না। আমি বললাম আমাকে আরো নসিহত করুন। তিনি বললেন, তোমার নিজের সম্পর্কে তুমি যা জান, তা যেন তোমাকে অপর লোকদের দোষত্রুটি সন্ধানের কাজ হতে বিরত রাখে। (বায়হাকী)
§ তাকওয়ার বিষয়টা মানব সৃষ্টির সূচনা থেকে–আদম আ. এর দুই সন্তানের কথোপকথন ছিল এভাবেঃ
﴿وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ ابْنَيْ آدَمَ بِالْحَقِّ إِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنْ أَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ الْآخَرِ قَالَ لَأَقْتُلَنَّكَ ۖ قَالَ إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ﴾﴿لَئِن بَسَطتَ إِلَيَّ يَدَكَ لِتَقْتُلَنِي مَا أَنَا بِبَاسِطٍ يَدِيَ إِلَيْكَ لِأَقْتُلَكَ ۖ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ رَبَّ الْعَالَمِينَ﴾
আর তাদেরকে আদমের দু-ছেলের সঠিক কাহিনীও শুনিয়ে দাও৷ তারা দুজন কুরবানী করলে তাদের একজনের কুরবানী কবুল করা হলো, অন্য জনেরটা কবুল করা হলো না৷ সে বললো, আমি তোমাকে মেরে ফেলবো৷ সে জবাব দিল, আল্লাহ তো মুত্তাকিদের নজরানা কবুল করে থাকেন৷ তুমি আমাকে মেরে ফেলার জন্য হাত উঠালেও আমি তোমাকে মেরে ফেলার জন্য হাত উঠাবো না৷ আমি বিশ্ব জাহানের প্রভু আল্লাহকে ভয় করি। (আল মায়িদাহঃ ২৭–২৮)
§ তাকওয়ার কথা কুরআন বলেছে মানব জাতিকে প্রথম সম্বোধনেইঃ
﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ﴾
হে মানব জাতি৷ ইবাদাত করো তোমাদের রবের, যিনি তোমাদের ও তোমাদের পূর্বে যারা অতিক্রান্ত হয়েছে তাদের সবার সৃষ্টিকর্তা, এভাবেই তোমরা নিষ্কৃতি লাভের আশা করতে পারো৷ (আল-বাকারাহঃ ২১)
§ তাকওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যখন নামাযের নির্দেশ দেয়া হয়েছেঃ
﴿وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ ۚ وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلَّا عَلَى الْخَاشِعِينَ﴾﴿الَّذِينَ يَظُنُّونَ أَنَّهُم مُّلَاقُو رَبِّهِمْ وَأَنَّهُمْ إِلَيْهِ رَاجِعُونَ﴾
সবর ও নামায সহকারে সাহায্য নাও৷ নিসন্দেহে নামায বড়ই কঠিন কাজ, কিন্তু সেসব অনুগত বান্দাদের জন্য কঠিন নয়৷ যারা মনে করে, সবশেষে তাদের মিলতে হবে তাদের রবের সাথে এবং তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে৷ (আল-বাকারাহঃ ৪৫–৪৬)
§ তাকওয়ার কথা বলা হচ্ছে–যখন রোযার নির্দেশ দেয়া হচ্ছেঃ
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ﴾
হে ঈমানদাগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী নবীদের অনুসারীদের উপর ফরয করা হয়েছিল৷ এ থেকে আশা করা যায়, তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণাবলী সৃষ্টি হয়ে যাবে৷ (আল-বাকারাহঃ ১৮৩)
§ তাকওয়ার কথা বলা হয়েছে–কুরবানীর ক্ষেত্রেঃ
وَعَنْ أبي هُريْرة < عَبْدِ الرَّحْمن بْنِ صخْرٍ < قَالَ: قالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: إِنَّ الله لا يَنْظُرُ إِلى أَجْسامِكْم، وَلا إِلى صُوَرِكُمْ، وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের শরীরের দিকে দৃষ্টি দেন না, না দৃষ্টি দেন তোমাদের চেহারার দিকে। কিন্তু তিনি দৃষ্টি দেন তোমাদের অন্তরের দিকে। (মুসলিম)
§ তাকওয়া এতো গুরুত্বপূর্ণ কেন?
– এই বিষয়টা বুঝার জন্য আমাদেরকে যেতে হবে ইতিহাসের কাছে।
– ইতিহাস বলছে, আল্লাহর রাসূল সা. যে দাওয়াত মক্কায় শুরু করেছিলেন, সেই দাওয়াত একদল মানুষ গ্রহণ করছিল, অন্যদল মানুষ প্রত্যাখ্যান করছিল।
– যারা প্রত্যাখ্যান করছিল–তারা কেন প্রত্যাখ্যান করছিল? তারা বুঝেছিলঃ
o এই দাওয়াত প্রচলিত সকল কিছু পালটিয়ে দিয়ে আল্লাহর নিয়মে চালানোর দাওয়াত।
o এই দাওয়াত আল্লাহর নিয়মে সব কিছু চালাতে মুহাম্মদকে নেতৃত্ব প্রদানের দাওয়াত।
o এই দাওয়াত মানে চলমান নেতৃত্বের আমূল পরিবর্তনের দাওয়াত।
o এই দাওয়াত মানুষের উপর মানুষের প্রভূত্ব খতম করে সকল মানুষকে একটি স্ট্যান্ডার্ড মর্যাদায় নিয়ে আসার দাওয়াত।
– যারা দাওয়াত কবুল করেছিলেন–তারা কেন কবুল করেছিলেন, তারা বুঝেছিলেন?
o এই দাওয়াত সমাজ পরিবর্তনের দাওয়াত।
o এই দাওয়াত শান্তি আর ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার দাওয়াত।
o এই দাওয়াত অধিকার প্রতিষ্ঠার দাওয়াত।
o এই দাওয়াত মানুষের প্রভূত্ব থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিজেদেরকে একটি স্ট্যান্ডার্ড মর্যাদায় নিয়ে আসার দাওয়াত।
– শোষন মুক্ত এই ধরণের একটি পরিবেশ তৈরী করার জন্য প্রয়োজন একদল মানুষ,
o যারা এই দাওয়াতের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগে প্রস্তুত হবে।
o যারা এই দাওয়াতকে তার জীবনের উদ্দেশ্য হিসাবে গ্রহণ করবে।
o যারা এই দাওয়াতের প্রয়োজনে নিজের দুনিয়াবী সকল স্বার্থ আর সুবিধাকে কুরবানী দেবে।
o যারা এই দাওয়াতের প্রয়োজনে নিজের সঞ্চিত সকল অর্থ সম্পদ বিলিয়ে দেবে।
o যারা এই দাওয়াতের প্রয়োজনে নিজের শিশুকাল, কৈশোর জীবন আর যৌবনের বসন্ত সমূহের স্মৃতিময় জন্মভূমিকে ত্যাগ করে, মা বাবা–ভাইবোন–স্ত্রী পুত্র–ব্যবসা বানিজ্য–জমি জমা–ধন সম্পদ সব কিছু ত্যাগ করে চির জীবনের জন্য অন্য জনপদে হিজরত করবে।
o আর এই অবস্থার সৃষ্টি তখনই হবে, যখন তার মাঝে থাকবে আল্লাহর ভয়।
o যে ভয়ের কারণে তারা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবে, অধিকারীর অধিকার প্রদান করবে।
o যারা চলবে মুহাম্মদ সা. এর নেতৃত্বে নিঃসংকোচে–বিনা প্রশ্নে।
– ১৪শ বছর আগে এমনই এক সময়ে রাসূল মুহাম্মদ সা. দীনের দাওয়াত দেয়ার পর যে মানুষ গুলো তার দাওয়াত কবুল করেছিলেন, তাদের মক্কার এলাকায় দাড়ানোর মতো একটুকরা জমি ছিল না।
– তাই নবী সা. সিদ্ধান্ত নিলেন, নিজেদের দাড়াবার মতো এক খন্ড জমি দরকার। যেখানেঃ
o নির্ভয়ে ইসলামের কথা বলা যাবে।
o এতদিন যে ন্যায় বিচার ও শোষণমুক্ত শাসন ব্যবস্থার কথা বলা হচ্ছে, তার একটা মডেল দাড় করানো যাবে।
o সেই মডেল রাষ্ট্র গঠন করার জন্য প্রয়োজন একদল মানুষ, যাদের গুনাবলীর কথা এতক্ষণ আলোচনা করা হলো।
o সেই মানুষ গুলোকে গড়ার জন্য তাদের মধ্যে আল্লাহর ভয় সৃষ্টির জন্য নামায ফরয করা হলো।
o সেই মানুষ–যারা মদীনায় হিজরত করলেন, তাদের হাতে এখন প্রচন্ড ক্ষমতা, তাদের জিম্মায় এখন মানুষের অর্থ সম্পদ।
o সেই অবস্থায় যাতে তারা ক্ষমতার অপব্যবহার না করেন, মানুষের সম্পদকে নিজেদের সম্পদ মনে না করেন, তার জন্য আল্লাহ রোযাকে ফরয করলেন–যাতে তাদের মাঝে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হয়।
– ইতিহাস সাক্ষী দেয়–সেই আল্লাহর ভয়ে ভীত মানুষ গুলোর নেতৃত্বে এমন একটা সমাজ প্রতিষ্ঠা লাভ করলো, যাঃ
o ১০০০ সুসজ্জিত বিশাল বাহিনীকে মাত্র ৩১৩ জনের বাহিনী বদরের প্রান্তরে নাস্তে নাবুদ করে ছাড়লো।
o যে মক্কা থেকে চোঁখে জলে সিক্ত হয়ে মানুষ গুলো মদীনায় হিজরত করলো, তারাই বিনা রক্তপাতে মক্কাকে দখল করলো।
o যাদের শাসন ব্যবস্থায় প্রধান বিচারপতি ১ বছর পর এসে রাষ্ট্রপতির কাছে দাবী জানালেন, বিচারপতির পদকে বিলুপ্ত করার জন্য। কারণ ১ বছরে তার আদালতে একটি মামলাও দায়ের হয়নি।
o যে শাসন ব্যবস্থার বারাকাতে মদীনার দিকে দিকে ঘুরে যাকাত খাওয়ার লোক খোঁজে পাওয়া যায়নি।
– সমস্যা সংকুল আমাদের প্রিয় জন্মভূমিকে সুখী সমৃদ্ধশালী একটি কল্যাণ রাষ্ট্র করতে হলে একদল আল্লাহ ভীরু মানুষের নেতৃত্ব প্রয়োজন।
– অতএব, আমাদেরকে সেই ধরণের আল্লাহভীরুতার গুণে গুনান্বিত হতে হবে। সুখী সমৃদ্ধশালী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যোগ্য কারিগর হতে হবে।
– এর মাধ্যমে আমরা হবো আল্লাহর যোগ্য খলিফা, যাদের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তৈরী করেছেন জান্নাত–যার নিচ দিয়ে প্রবাহমান ঝর্ণাধারা।
আমাদেরকে আল্লাহ সেই জান্নাতের মেহমান হিসাবে কবুল করুন। আমীন।